Select Page

বাড়ী নাকি বাড়ি, পাখী নাকি পাখি?

বাড়ী নাকি বাড়ি, পাখী নাকি পাখি?

(অনেকেই বাড়ী না লিখে বাড়ি লিখেন, পাখী না লিখে পাখি লিখেন; কিন্তু কেন? চলুন দেখা যাক নারায়ণ চন্দ্র দাসের এই লেখায় আমরা এই প্রশ্নের উত্তরটি পাই কিনা।)

ই বর্ণের অর্থ সক্রিয়ণ, ঈ বর্ণের অর্থ সক্রিয়ণের আধার। পাখ-এর সক্রিয়ণ পাখি, আর পাখ-এর সক্রিয়ণ অস্তিত্ব লাভ করে যে আধা্রে, অর্থাৎ ‘পাখি’ থাকে যে আধারে সে হল পাখী। ঠিক যেমন বাড় (বৃদ্ধির)-এর সক্রিয়ণকে বাড়ি শব্দে বোঝান হয়, তেমনি বাড়ি যে আধারে থাকে তা’কে বাড়ী বলে। তরণের গতিশীলতা(সক্রিয়ণ) রহে যাহাতে তা’কে বলা হয় ‘তির’; আর তির তির করে বয়ে চলা জলধারাকে ধরে রাখে যে সে হল তীর অর্থাৎ তির-এর আধার হল তীর। ফর্ম এবং কণ্টেণ্ট, আধার এবং আধেয় এমন ধারণা-দর্শনের অভাবেই বাংলাভাষার স্বভাব-সঙ্গত নিয়মকে না বুঝে, তথাকথিত সরলীকরণের নামে এভাবে এমন স্বকপোলকল্পিত নিয়মের দণ্ডাজ্ঞা কিংবা ফতোয়া উভয় বাংলার ভাষাজগতে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ফতোয়া জারী করা হয়েছে তৎসম ছাড়া সব ক্ষেত্রেই, ‘তদ্ভব’-র ক্ষেত্রে এবং ‘অর্দ্ধতৎসম’-এর ক্ষেত্রেও। আমরা এই ভবসংসারে এসেছি ‘তৎ’ থেকে (‘তৎ হইতে ভব’) অর্থাৎ আমদের পূর্ব্বপুরুষ-এর থেকে আমাদের জন্ম। অথবা পূর্ব্বপুরুষের বংশে জন্মে আমরা তাদের পুরো সমান হতে পারিনি, অথবা অর্দ্ধেক সমান হয়েছি। তাই তাঁদের অন্যান্য স্বভাব-বৈশিষ্ট্য থাকুক না থাকুক শুধুমাত্র আমাদের দাড়ি-গোঁফের আকৃতিটুকু একই রকমের হতে হবে, ঠিক ‘ই’-এর মতো। কেউ যেন ভুলেও দীর্ঘ-ঈ-এর মত দাঁড়ি-গোঁফ না রাখেন – এ জাতীয় ফতোয়া জারী করার পিছনে অজুহাত হিসেবে বলা হয় আমাদের ভাষাকে আধুনিক এবং যুগোপযোগী করতে হলে এসব করতে হবে। বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রেও নাকি শুধুমাত্র হ্রস্ব-ই-এর ব্যবহার করতে হবে। ইংরেজের সক্রিয়ণ হল ইংরেজি, আর ইংরেজের সক্রিয়ণ থাকে যে আধারে সে হল ইংরেজী – এভাবে ভাবলে চলবে না। তাছাড়া, এটা নাকি বাংলাভাষাভাষিদের বুঝতে অসুবিধা হবে, এই নিয়ম জটিল এবং অনাধুনিক। অর্থাৎ আমাদের শব্দার্থকে আমাদের স্বভাব-সঙ্গত নিয়ম অনুযায়ী হবে না ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক হবে না; হতে হবে লোগোসেণ্ট্রিক, একার্থবাচক, স্থির এবং নির্দ্দিষ্ট। তাতে লক্ষণ, ব্যঞ্জনা, ব্যাপ্তি ইত্যাদি অর্থ না থাকলেও চলবে। লক্ষ কোটি পণ্যের যেমন পৃথক সুনির্দ্দিষ্ট লোগো থাকে ঠিক তেমন নিয়মে চলতে হবে। ই-ঈ, উ-ঊ ইত্যাদি থেকে একটিকে ফেলে দিতে হবে! অথচ ভেবে দেখেছেন কি, ই-ঈ, উ-ঊ ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে নিয়ম ১৯৩৫ সালে গঠিত বাংলা বানান সংস্কার সমিতি গঠনের আগে চালু ছিল, তারপর আজ তৎসম, তৎভবব, অর্দ্ধতৎসম, দেশ্জ, বিদেশী ইত্যাদি আলাদা আলাদ শব্দের জাতিপ্রথা চালু করে চার-পাঁচ রকম শব্দের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম চালু করা হলা ই-ঈ, উ-ঈ ইত্যাদির ক্ষেত্রে। এভাবে জটিলতা বাড়লো না কমল? কোনটা, আপনারাই বলুন।

আধার,আধেয়,সক্রিয়ন, শব্দগুলোর ব্যাখ্যা

সক্রিয়ণ=সক্রিয়করণ। কোন স্থির নিশ্চলকে গমনশীল বা গতিশীল করার নাম হল সক্রিয়ণ। যেমন ক=করণ; কারী। এই ‘ক’-কে সক্রিয় করার কাজের নাম হল সক্রিয়ণ অর্থাৎ ক+ই=কি। আবার করণ বা কারী থাকে যে আধারে সেটা হল ক+ই+ই=কী। পাত্রে যখন জল বা তেল রাখেন তখন পাত্র=আধার; এবং জল বা তেল= আধেয়। বাড়ী=যে আধারে বা বাড়ীতে, আধেয়-সকল=পরিবারের সদস্যবৃন্দ, গাছপালা, পশুপাখী সকলেরই বিকাশ বা বৃদ্ধি হয়। [বাড়=বিকাশ বা বৃদ্ধি; বাড়ি=বিকাশ বা বৃদ্ধির সক্রিয়ণ] বাংলার প্রতিটি বর্ণই অর্থধারী আর তাই বর্ণ যেমন খুশী ব্যবহার করা যায় না, বর্জ্জনও করা যায় না। শব্দের অর্থ পরিপূর্ণভাবে প্রকাশের জন্য যে যে বর্ণের ব্যবহার আবশ্যক তা না করলে উদ্দীষ্ট অর্থ বোঝানো যায় না

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার