
প্রসঙ্গ: বন্ধু/বন্ধুনি/ বন্ধুনী

বন্ধ(ন)+উ=বন্ধু। এই বন্ধন-এর সম্পর্ক লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। ‘বন্ধ'(ন) কে নবরূপ দিয়ে অর্থাৎ ‘উ’-যোগে [বন্ধ+উ] ‘বন্ধু’ করা হয়েছে, যার ফলে বন্ধন ‘উ’-এর আধারে আশ্রয় পেয়েছে, অথবা, বন্ধন বা বাঁধন তার স্বরূপ হারিয়ে নবোত্তীর্ণ রূপে বন্ধু-তে বদলে গেছে। তাছাড়া বন্ধন তো লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ভাবে এক বা একাধিক কিংবা অজস্র সংখ্যায় পুরুষের সঙ্গে পুরুষের, নারীর সঙ্গে নারীর কিংবা বিপরীত লিঙ্গধারী নারী ও পুরুষের বন্ধনকেও নবরূপে উত্তীর্ণ করে বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়াতে পারে পারে। প্রশ্ন হল, একজন পুরুষ তার নারী বন্ধুকে বন্ধু বলে সম্বোধন করতে অসুবিধা কোথায়?!! নারী পুরুষ নির্ব্বেশেষ সকলেই একে অপরকে বন্ধুত্বের বন্ধনে বাঁধতে পারেন এবং বন্ধুরূপে পরস্পরকে সম্বোধন করতে পারেন, তখন ‘বন্ধুনি’ শব্দ তৈরীর প্রয়োজনটাই বা কি? মানুষ প্রয়োজন ছাড়া শব্দ তৈরী করতেই বা যাবে কেন?। ইতোমধ্যে স্ত্রীদেহধারী মানুষটিকে সম্বোধনবাচক ‘বন্ধু’ শব্দের সাহায্যেই বন্ধু হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার উপযুক্ত শব্দ হাতের কাছেই মজুত আছে এবং সেই বন্ধুটির সঙ্গে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার ক্ষেত্রে কোন সমস্যাই নেই, সেখানে লিঙ্গ-ধারণার লেজুড়টিকে শব্দের ভিতরে না ঢোকালেই নয়? সম্পর্কের বন্ধনটাই যেখানে মুখ্য ধারণা এবং বন্ধু শব্দের ভিতরেই যে মুখ্য সম্পর্কের স্বীকৃতি এবং মর্য্যাদা ঘোষিতভাবেই উপস্থিত রয়েছে সেখানে গৌণ লিঙ্গ-পরিচয়টির গুরুত্ব কতখানি? একমাত্র বিপরীত লিঙ্গ-পরিচিতির উপরে স্থাপিত ‘বিবাহ’ শব্দের লিঙ্গ শব্দের ক্ষেত্রের চিরাচরিত লিঙ্গভেদের দৃষ্টিভঙ্গী দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তবুও যদি কেউ মনে করে থাকেন যে ‘বন্ধু’ শব্দের মধ্যে লিঙ্গ-পরিচয় ধৃত না থাকলে বন্ধুর অ-মর্য্যাদা হতে পারে বা বন্ধুত্বে খামতি থেকে যাবে; তেমন মনে হলে – ‘বন্ধু’ থেকে ফিরে যেতে হবে ‘বন্ধ'(ন)-এ বা ‘বন্ধ’-এ; অর্থাৎ বন্ধনের বাহক বান্ধব-এ। বন্ধু থেকে বন্ধুত্ব-বহনকারী শব্দ [ (বন্ধ-এর আধার) বা ‘বান্ধ’+’ব’ (বহনকারী) = ‘বান্ধব’] বান্ধব-এ। ‘বান্ধব’কে স্ত্রীলিঙ্গে বদলে নিয়ে [বান্ধব+ঈ=] ‘বান্ধবী’ শব্দ তৈরী করে তার ভিতরে লিঙ্গ- পরিচয়কে অন্তর্ভুক্ত করার আয়োজন করাই আছে। কিন্তু একবার ‘বন্ধন’-কে নবরূপে পালটে দেবার পর অর্থাৎ, একবার বিশেষ্যে উন্নীত করে ফেলার পর সেই বিশেষ্য-শব্দটি যেহেতু লিঙ্গ-নির্ব্বিশেষে ব্যবহারের উপযুক্ত রূপে গঠিত হয়ে গেছে, তারপর তাকে আর নতুন করে স্ত্রীলিঙ্গে পালটে নেবার কোন যুক্তিগ্রাহ্য প্রয়োজন নেই বলে তার লিঙ্গরূপ দেওয়া যাবে না। বন্ধু কোন ক্রিয়াবাচক শব্দ নয়, সেটা ক্রিয়াবাচক হলে তবেই তাকে বিশেষ্যে পাল্টানো যেতে পারত। তাই বন্ধুনি বা বন্ধুনী শব্দের গঠনে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কেউ কেউ শব্দটিকে ব্যবহারিক জগতে চালাতে চান। কিন্তু, ব্যাকরণ শাস্ত্র সম্মত নয় বলেই বন্ধুনি শব্দটির কোন ব্যাকরণের দিক থেকে তার কোন মান্যতা নেই। তবে, বানানরীতি না মেনেও কেউ কেউ যেমন ‘ধন্যযোগ’-এর মত অনর্থবাচক শব্দ ব্যবহার করতে চান তেমনি করেই কেউ কেউ ‘বন্ধুনী’ শব্দটিকেও চালাতে চাইছেন – এমনটাই আমার ধারণা। অচল মুদ্রা চালানোর মত চালালেই চলে এমন দর্শনে যাঁরা বিশ্বাস করেন, তারা তা করতেই পারেন – সেটা ভিন্ন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য