Select Page

মেলেনা: পরিমণি এবং অন্যান্য

মেলেনা: পরিমণি এবং অন্যান্য

চিরকালীন অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন প্রেক্ষাপটের নারী একটি চরিত্র ‘মেলেনা’ কে নিয়ে ইতালিয়ান নির্মাতা জিউসেপ টরনেটো’র ‘মেলেনা’ চলচ্চিত্রটি ইতালিয়ান হলেও এই চিত্রটি কোন বিশেষ সময় দেশ কিংবা স্থানের নয়, সর্বব্যাপি সার্বজনিন চির আধুনিক।

আর ২০২১ এর আফটার জুলাই এর সময়টিতে বাংলাদেশের কোন নাগরিক এই চলচ্চিত্রটির টেক্সট পাঠ করলে যে মুখটি তার সামনে ভেসে উঠবে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শিল্পী- পরিমণি। কারণ জুলাইয়ের এই তপ্ত দাবদাহে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পী পরিমণিকে ঘিরে হাঁটে বাজারে গ্রামে শহরে গড়ে উঠেছে গণ আদালত এর গণমঞ্চ। এই লেখাটি মেলেনা চলচ্চিত্রটির যতটা না পর্যালোচনা তার চেয়ে অধিক চলচ্চিত্রটিকে আগ্রহিদের দেখতে উদ্বুদ্ধ করণ এবং মেলেনার চিত্রটির সাথে বিংশ শতাব্দির বাংলাদেশী বাঙালী নারী সমাজের প্রতিনিধি পরিমণির মাধ্যমে সমাজের অন্যান্য নারীদের অবস্থানটুকুও একটু মিলিয়ে দেখা। সিনোপসিসটি  মেলেনা এবং পরিমণি কিংবা অন্যান্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সমাজে নারীদের অবস্থানের পর্যায়টি যথাযথভাবে নির্ধারণে সহায়ক হবে –

অফিশিয়াল পোস্টার

মেলেনা ভূ-মধ্যসাগরের বৃহত্তম দ্বীপ সিলিলি’র (যা ইতালির এক স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপ) ছোট্ট একটি শহরের একজন সুন্দরী আকর্ষণীয় নারী। শহরের নানা বয়সের নানা পেশার সকল পুরুষের ই সে কামনার বস্তু এবং এই কারণেই অন্য রমনীদেরও সে হিংসার কারণ। বিবাহিত মেলেনার স্বামী আফ্রিকায় মিত্রবাহীনির বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারানোর সংবাদ আসে মেলেনার কাছে। যুদ্ধকালীন সময়ের মতো একটি অস্থির সময়ে মেলেনা একা একটি বাড়িতে বসত করেন। সেখান থেকে অদূরে তার বৃদ্ধ শিক্ষক একাকী বাবার দেখাশোনাও সে করে। তার বাবার থেকেও একসময় সে নানা গুজবে প্রত্যাখ্যাত হয়, পরবর্তীতে মিত্রবাহীনির আক্রমণে একসময় তার পিতা নিহত হন। প্রাত্যহিক চলনে মেলেনাকে আমরা – এমনকি কারো দিকে মুখ তোলে তাকাতেও দেখি না।

পিতার মৃত্যুপূর্বেই এক অবিবাহিত বিমান বাহীনির অফিসার রাতে তার বাসায় গেলে তাকে নিয়ে নানা ধরণের গুজব শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। তার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় । আদালতে তার আইনজীবি অফিসারটিকে তার অকেশনাল বন্ধু বললে মেলেনা নিন্দা বা প্রতিবাদের বিপরিতে চুপ করে থাকে। মেলেনা খালাশ পাওয়ার পর তার আইনজীবি এই সুযোগে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

স্বামী এবং পিতার মৃত্যুতে স্বজনহারা মেলেনা নানা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন এর শিকার হয়ে কোথাও কোন কাজ না পেয়ে একসময় পতিতাবৃত্তিতে নাম লেখায়। শহরবাসীর মুখে এইবার যেনো হাসি ফোটে।

নাৎসি জার্মান সৈন্যদের সাথে তার যে সম্পর্ক সখ্যতা তৈরি হয়, মিত্রবাহীনি কতৃক নাৎসিদের পশ্চাদপসরনে এবং আমেরিকার উৎসবমুখর আগমনের মুহুর্তে শহরের রমণীরা তাকে হোটেল থেকে টেনে ছ্যাচড়ে বের করে জনসম্মুখে নির্মম শারীরিক নির্যাতনে বিধ্বস্ত করে। তার চুল কেঁটে দিয়ে তাকে অপমানের চূড়ান্তে নিক্ষেপ করে। এতদিনকার হিংসা, অহেতুক ক্ষোভ যেন বিসর্জন উৎসবের মাধ্যমে হিংস্র উল্লাসে ফেঁটে পড়ে শহরের ছোট চত্বরটিতে। এতদিনকার জমানো হিংসা আর ক্রোধ যেনো অগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত আকারে বেরিয়ে আসে। চূড়ান্ত বিধ্বস্ত মেলেনার শহর ত্যাগ করা ছাড়া আর পথ থাকে না। মেলেনার যাপিত জীবনের খুঁটিনাটি আর নাগরিকদের নেরেটিভ এর সাথে দর্শক পর্যটকের মতো পরিচিত হয় এই শহরের ই কিশোর চরিত্র রেনাতো আমোরোসোর সাহচর্যে।

ঝঞ্জার এ সময় শান্ত হলে একদিন মেলেনার স্বামী ফিরে আসে এবং মেলেনার খোঁজ করতে থাকে। মেলেনাকে খোঁজে পেতে যখন সে ব্যর্থ তখন কিশোর আমোরোসো ই মেলেনার হদিস তার স্বামীকে জানায়। মেলেনার স্বামী মেলেনাকে খোঁজে বের করে একদিন পুনরায় শহরে নিয়ে আসে।

চলচ্চিত্রটির শেষ দৃশ্যে আমরা দেখি মেলেনা বাজার করে ঘরে ফিরছে। আর তার বাজারের মুহুর্তটিতে তাকে নির্যাতন করা মহিলারা এবং শহরের অন্য রমনীরা তার সাথে সম্মানজনক ব্যাবহার করছে। যেনো তাদের কাঙ্খিত, নারীর সেই গার্হাস্থ্য রুপে আবির্ভূত হয়ে মেলেনা তাদের সমাজের অংশ হয়ে উঠার যোগ্যতা অর্জন করেছে এতদিনে। তাছাড়া মেলেনার একটি নির্দিষ্ট পুরুষও হয়েছে। যে সব বৈশিষ্ঠ তাদের দৃষ্টিতে তাদের সমাজে বসবাসের অবশ্য অর্জনীয় শর্ত।

উপরোক্ত গল্পটির সাথে হুবহু না মিললেও পরিমণি যেনো সেই মেলেনা ই। সিনেমাটির নানা কুশলতায় আপনি তা ই রিলেট করবেন। পরিমণি কেবল একটি ব্যক্তি নয়, কেবলমাত্র গ্ল্যামার জগতের বাসিন্দা কোন পেশাজীবি নয়। পরিমণি সারা দুনিয়ার নারীসত্তার এক প্রতীক বিশেষ। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি যাকে বিবেচনা করে শরীর সর্বস্ব এক বস্তু হিসেবে। আমাদের মনোজগতের হিংসা আর তার শারীরিক সৌন্দর্যকে পৌরুষেয় বেদির সামনে নতজানু না করতে পাওয়ার ক্ষোভ, যেনো তাকে পর্যুদস্তু করতে পারলেই শান্তির নিদ্রার সাহচর্য পায়।

চলচ্চিত্রটি ইরোটিক কমেডি ড্রামা জনরার, এইটিন প্লাস। যে লালসা আর হিংসার মৌল উপাদান যৌনতা , হিংসা তার উপযুক্ত বাস্তব চিত্র কী যৌনতাকে লুকোছাপা করে নির্মাণ সম্ভব ?

চলচ্চিত্রটি ডিরেক্টর, সিনেমাটোগ্রাফি, সঙ্গিত সহ নানা ক্যাটাগরিতে নানা উৎসবে একাডেমি এওয়ার্ড মনোনয়ন সহ নানা পুরষ্কারে মনোনিত হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার লুসিয়ানো ভিনসেনজোনি চিত্রনাট্যের ডক্টর নামে পরিচিত।

এতে প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রখ্যাত ইতালিয়ান মডেল এবং অভিনেত্রী মনিকা বেলুচ্চি মেলেনার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এবং ১৩ বছরের একটি কিশোর চরিত্র রেনাতো আমোরোসোর ভূমিকায় ছিলেন জিউসেপ সালফারো।

চলিচ্চিত্রটির ট্রেলার লিংক : https://www.youtube.com/watch?v=SxqUoUvNBXY&t=13s

মন্তব্য করুন