Select Page

‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প

‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প
চিত্রকর্ম: কামরুল হাসান

গপ্পবাজ বাঙালির জীবনে আর যা কিছুর অভাব থাক, অভাব নেই গল্পের। আর গল্পের অভাব হবেই বা কেন–আমাদের স্বপ্নবিলাসী মন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে। তাই তো গপ্পবাজ টেনিদা বা কাঠিমামা আমাদের এতো প্রিয়। কি নেই আমাদের গল্পে–দেশ, দশ, বিশ্ব থেকে মহাবিশ্ব। গল্পে আমরা দেশোদ্ধার করি, গল্পে আমরা রাজা-উজির পরাস্ত করি, গল্পে আমরা হাতি-ঘোড়াও মারি। আমাদের মন বড় কল্পনাবিলাসী। আর বাঙালির কল্পনাবিলাসের মূল কেন্দ্রে বোধ হয় রয়েছে তার ‘বাঙালিয়ানা’। এটাই বোধকরি বাঙালির সব থেকে বড় বাঁধনহারা কল্পনার প্রকাশ। কিন্তু বাঁধনহারা এই কল্পনাকে বাঙালি আবার মাপে টাকা-আনা-পাই দিয়ে, নয়তো এ নিয়ে গপ্প করবার সুযোগটা আবার না হাতছাড়া হয়!! কে কার চেয়ে বেশি বাঙালি তার তুল্যমূল্য করবার গপ্পগুলোও কিন্তু বেশ জমাটি। ‘ষোলো আনা’ না হলে আবার বাঙালি কিসে! তাই আমাদের চিরন্তন গল্পগুলো হল ‘ষোলো আনা’ বাঙালিয়ানার গল্প।

কী আছে এই ‘ষোলো আনা’ বাঙালিয়ানার গল্পে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, দেশবিভাগের কাঁটাতারের যন্ত্রণা পেরিয়ে, বিশ্ববাঙালি হয়ে ওঠবার নিরন্তর সংগ্রামের পরও আমাদের ছোট ছোট অনুভূতিগুলি, দুঃখ-সুখ-শোক-আনন্দ-যন্ত্রণা নিয়ম ভাঙার উচ্ছ্বাস আর আড্ডার উল্লাস চিরন্তন। সেখানে আমরা সবাই সেই ‘ভেতো’ বাঙালি–ভুলেও যেন ‘ভোঁতা’ ভাববেন না। অনুভূতির পরাকাষ্ঠা আমাদের বড়ই টনটনে–বড় অনন্য। এমন এমন সব অনুভুতির প্রকাশ আমাদের শব্দকোষে আছে যার প্রতিশব্দ কিন্তু জগতের আর কোন ভাষায় পাওয়া যাবে না। এই যে ভাবুন আমাদের বাঙালিমন জানে ‘অনুরাগে রাঙা’ হতে আবার সেই আমাদেরই অল্পতেই ‘আঁতে ঘা লাগে’; কিংবা মাঝেসাঝেই আমরা ‘আহ্লাদে আটখানা’ হই; অথবা ধরুন যখন তখন আমাদের ‘মেজাজ খিঁচড়ে’ যেতেই পারে– এখন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন তো অন্য ভাষাভাষীর কাছে, অবাঙালির সঙ্গে গল্পে!! ‘হাল ছেড়ে’ দেওয়া ছাড়া গতি নেই কারণ এ সব অন্যদের ‘পাতে দেবার মতো’ নয়। এ সব আমাদের একান্ত নিজেদের অনুভূতি, আমাদের চিরন্তন গল্পের উপাচার। আর তাতেই গল্পবাজ ‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প কাঁটাতারের এপারে কিংবা ওপারে; দেশে কিংবা বিদেশে; ছোটবেলায় কিংবা বুড়োবেলায়; এই প্রজন্মে কিংবা পঞ্চাশ বছর আগে কিংবা পরে–সবখানে, সর্বত্র এক সুতোয় গাঁথা।

গল্পবাজ ‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্পে ঠাকুর বলতে রবিঠাকুর, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মানেই নজরুল, ভালো ‘বই’ দেখা মানে উত্তম–সুচিত্রা, ‘গোল’ মানে দুরকম–লুচির গোল আর ফুটবলের ‘গোল’। ‘রামগড়ুরের ছানা’ শব্দযুগল আমাদের গল্পে চরিত্র বিশ্লেষক অনন্যমাত্রিক এক বিশেষণ। আমরা সবাই একেকজন ফেলুদা কিংবা ব্যোমকেশ। পরের হাঁড়ির খবর নেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য, না হয় আর আমরা বাঙালি কিসে, (বের করুন তো প্রাইভেসির বাংলা প্রতিশব্দ!!)। আমাদের রাগে অনুরাগ আছে বিরহ, আছে, আছে অভিমান যা একান্ত আমাদের (বের করুন না ইংরেজি প্রতিশব্দ অভিমানের!!)। আর কখনো ভেবে দেখেছেন কি ‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প বা তার জীবনচর্চা এমন ‘কান্নাহাসির দোল দোলানো’ বৈপরীত্যময় কেন, কেনই বা ক্ষণে ক্ষণে আমাদের আবেগের এতো টানাপোড়েন চলে? বাঙালিই মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র জাতি যার কাছে একই শব্দে ক্রোধ আর প্রণয় প্রকাশমান হয়। অবাক হলেন? ভাবুন তো ‘রাগ’ শব্দ টা–এক দিকে এর মানে প্রেম, প্রণয় অন্য দিকে রোষ, ক্রোধ। তো আমাদের জাতি চরিত্রে বৈপরীত্য থাকবে না তো কাদের থাকবে!!!! আর তাই শুধুমাত্র সুয়োরাণীকে নিয়ে আমাদের গল্প পূর্ণতা পায়না। দুয়োরাণী না হলে চলে নাকি!! আর সেই দুয়োরাণীকে সুখের মুখ দেখিয়ে তবেই আমাদের গল্পের ‘নটে গাছটি মুড়োল’।

দুয়োরাণীর কথায় মনে হল আমরা বাঙালিরা কিন্তু বড্ড দুঃখবিলাসীও বটে। চিরকাল দুঃখকে, দুঃখী চরিত্রদের আমরা বেশি ভালবেসেছি। ‘ষোলো আনা’ বাঙালির কাছে নিরঙ্কুশ সুখ কিংবা নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ খানিকটা নিষিদ্ধবস্তুর মতো, খানিক সময়ের জন্য দেখা মিললেও আমরা সুখের সময় কাটাতে গিয়ে খানিক অপরাধবোধে ভুগি বা মন ‘কু গাইতে’ থাকে। ভাবুন তো খুব ছোট বেলাতে খুব হাসি-আনন্দে সময় কাটাতে থাকলেই পরিবারের গুরুজনেরা এসে বলতেন ‘যত হাসি, তত কান্না, বলেছেন রাম সন্যা’। ঐ রাম সন্যা ব্যক্তিটিকে যদি খুঁজে পেতাম কোনদিন, তাঁকে ‘এক চোট দেখে নিতাম’ ছোটবেলাকার সকল আনন্দের মুহূর্তে খানিক করে ‘জল ঢেলে দেবার জন্য’। কিংবা ভাবুন তো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্কুল পড়ুয়া বাঙালিমাত্রেই খাতার পৃষ্ঠাভরে ভাব সম্প্রসারণ করেছে ‘দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে’। এই যে গল্প পড়ে কিংবা শুনে দুয়োরাণীর জন্য চোখের জল ফেলে বড় হতে হতে, আমরা কোথাকার কোন রাম সন্যার শাসানিতে আনন্দ করতে করতেই কান্নার জন্য মন তৈরি করে ফেলি আশৈশব, তো আমরা দুঃখবিলাসী হবো না তো কে হবে।

আর কে কোথায় আছে এ জগতে যে কিনা একই সাথে দুঃখবিলাসী আর স্বপ্নবিলাসী–হোক না খুব ছা-পোষা, হোক না বড্ড আটপৌরে ‘ষোলো আনা’ বাঙালির জীবন, কিন্তু আ-মরি বাংলা ভাষায় বোনা আমাদের সব গল্প দুঃখ কে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখবার গল্প। আর ঠিক এখানেই আমরা অনন্য।
ঐ যে স্বপ্নবিলাসী বাঙালি আর তার গল্পের কথা হচ্ছিল, তার বীজ কিন্তু সেই শৈশবেই বোনা হয় আমাদের মানসে। ঠাকুরমার ঝুলি থেকে রবিঠাকুর–সবেতেই মনে মনে রাজপুত্র আর রাজকন্যা আমরা। আবার আমাদের সবার মাঝেই সেই ছোট থেকে গুপী বাঘা বাস করে–আটপৌরে ছাপোষা মা বাবার ঘরে জন্মেও তো ভূতের রাজার বর মিলতে পারে , তাই না? আর সে কি যে সে বর, ‘তিন তিন বর’ আর তাতেই কেল্লা ফতে – রাজত্ব আর রাজকন্যা !

চিত্রকর্ম: নিখিল চন্দ্র দাশ

ভূতের রাজার কাছে চাওয়া তিন বরের মধ্যে এক বর ছিল ইচ্ছেমত খেতে পারবার বর–আর এখানে বাঙালির অনন্য অসাধারাণত্ব। উদারতা থাক বা না থাক ঔদরিকতা বাঙালির ‘ষোলো আনা’ বাঙালিয়ানার অপরিহার্য অংশ। খাওয়া আর খাবার গল্প ছাড়া বাঙালির গল্পের পূর্ণতা কোথায়!! বাঙালি মাত্রেই ভোজনরসিক। তাই তো আমাদের মনের রাস্তার দেখা মেলে উদরের রাস্তা ধরে। নিজেদের খাবার তো আছেই, আমাদের রসুইঘরে নিরামিষ থেকে আমিষ, মোগলাই থেকে চীনে, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য সব আছে। আকাশে মেঘ জমলে আমরা হাড়িতে খিচুড়ি চাপাই, জানালাতে হিম জমলে পিঠে পায়েস বানাই, গরমের দুপুর আচারের বয়ামময়–তাই বাঙালির প্রবাদ হয় ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’। তো আমাদের গল্পে খাবার গল্প থাকবে না তো কার গল্পে থাকবে!!

খিচুড়ির কথায় যখন বর্ষাদিনের কথা এলোই, তখন মেঘ, বর্ষা, বৃষ্টির সাথে বাঙালির গভীর আত্মিক ভালোবাসার কথা না বললেই নয়। হলফ করে বলতে পারি আমাদের প্রত্যেকের কাছে অন্তত একটি করে বর্ষাদিনের গল্প আছে–হোক সে সুখের, শোকের, আনন্দের, বিরহের অথবা প্রেমের। বর্ষা বাঙালির কাছে রোমান্টিকতা বা কল্পনাবিলাসের আরেক নাম। তাই বাঙালির গল্পে, গানে, কবিতায় মায় ভূতের গল্পে অব্দি বর্ষা মিলেমিশে আছে যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। মাঝে মাঝে ভাবি কি আছে এই বর্ষাতে কিংবা বৃষ্টিতে ! বাস্তবিক অর্থে বর্ষা মানে তো দিনমান বৃষ্টি, রাস্তায় জল–কাদা, গাড়ি বন্ধ, ঘর বন্দীদশা!! তবুও আমরা বৃষ্টি ভালোবাসি, কেন? ঐ যে বললাম না আমরা বৈপরীত্য ভালোবাসি–তপ্ত গরমদিনের পর বৃষ্টির আদর আমাদের ভালোলাগে। দুঃখবিলাসী মন তখন আরও বেশি দুঃখের ছবিতে স্বপ্নের রঙ চড়াতে পারে। আর ঘোর বর্ষার দিনে ‘ষোলো আনা’ বাঙালির অলস আড্ডা নিত্য নতুন গল্পের যোগান দেয়। এসব আড্ডায় সকলেই কিন্তু বক্তা। তার ওপর প্রজন্মান্তরে, স্থানান্তরে এসব আড্ডায় কিন্তু গুলতানি বিশারদ এক দুজন টেনিদার দেখা মেলাও অসম্ভব নয়। এই আড্ডা বা গুলতানি শব্দ দুটোও কিন্তু একান্ত বাঙালির, এদের পরিভাষা খোঁজা অনর্থক সময় নষ্টমাত্র। দুঃখবিলাসের সাথে স্বপ্নবিলাসের মিশেল না হলে এদের দেখা মেলেনা।

স্বপ্নবিলাসী এই আমাদের মানে বাঙালি্দের কিন্তু আবার বড্ড প্রেমিকমন। আর আমাদের মতই আমাদের প্রেমও বড় সোজাসাপ্টা নয়। আমাদের প্রেমে পূর্বরাগ আছে, আছে অনুরাগ-অভিসার। মিলন আছে কিন্তু ভীষণ ভাবেই আছে বিরহ। আর আছে অভিমান। এ সবই বাঙালির একান্ত নিজস্ব অনুভূতি, একান্ত আপনার। যুগ বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, বদল ঘটেছে আমাদের ধ্যানধারণাতেও। কিন্তু আমাদের প্রেমের গল্পে পূর্বরাগ, অনুরাগ, অভিসার, মিলন, অভিমান-বিরহ-বিচ্ছেদ রয়েই গেছে, আর থাকবেও চিরকাল কারণ এ যে একান্ত আমাদের নিজের, শুধুমাত্র ‘ষোলআনা বাঙালিয়ানার’ গল্প। দুনিয়াতে আর কে এমন করে বলতে পারে ‘বিরহ বড় ভালো লাগে’ অথবা ‘গানে গানে ঢাকবো আমার গভীর অভিমান’!!

‘ষোলো আনা’ বাঙালির দুঃখবিলাসী মন তার প্রেমের প্রকাশেও ভাগ বসিয়েছে। তাই অশ্রুজল, সজল আঁখি আমাদের গানে কবিতায় বারবার ফিরে আসে। গল্পের বই পড়ে চোখ ভেজায়নি এমন বাঙালি কই? কিংবা এতো রকম ঝুটঝামেলাময় জীবন কাটিয়েও আমরা আজও সিনেমা দেখে নায়ক বা নায়িকার কষ্টে কেঁদে বুক ভাসাই। কান্না কে ঘিরে কিংবা কষ্ট বুকে চেপে চলার অনুভূতি এতো গান আর কোন ভাষায় কবে লেখা হয়েছে? তাই তো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দেবদাস আমাদের নায়ক হয়, ‘দুঃখ অসীম পাথার পার’ করে শেষকালে ‘তোমার বীণার তার হল’। দুঃখবিলাসী ‘ষোলো আনা’ বাঙালি দুঃখ আর কান্না নিয়ে যত গান কবিতা লিখেছে আর কেউ লিখেছে কিনা তার সিকিভাগও সে নিয়ে আমার যারপরনাই সন্দেহ আছে–‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’ ভাবা যায়!!! বাসর রাতেও দুঃখের ছাড় নেই, দুঃখবিলাসী হতে বাঁধা নেই!! আর ভাবছেন সে ছিলো আগের কালে, এখন এসব চলে না, তবে আপনি বাঙালির দুঃখবিলাস ব্যাপারটাই ধরতে পারেননি। হয়তো সে কারণেই আমাদের গল্পের গভীর প্রেমের অনুভূতিগুলো যুগে যুগে চোখের পাতা ভিজিয়ে দেয়, বুকের ভেতরখানা মুচড়ে দেয়। তাই তো বাঙালির গল্পে ‘প্রেমের মরাও জলে ডোবে না’।

স্বপ্নবাজ গল্পবাজ আমাদের দুঃখবিলাসী মনের কাছে ফেলে আসা দিনগুলি সবসময় সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে রঙিন। আমাদের গল্পে তাই ঘুরে ফিরে আসে সেই ফেলে আসা দিনের গল্প–অতীত তাই সোনালি আমাদের চোখে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঙালি তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলেছে ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না’। দিন সোনার খাঁচায় থাকেনি হয়তো, সময়ের প্রবাহে প্রজন্মান্তরে ঘটেছে অনেক বদল, মনের ভাব প্রকাশের আঙ্গিকে, মাত্রায় এসেছে ভিন্নতা কিন্তু বাঙালি বাবা-মায়েরা এখনো কামনা করে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। কালের চক্রে বাঙালি এখন ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু ‘ষোলো আনা’ বাঙালি হয়ে ওঠবার বাঁধনহারা কল্পনাবিলাসী পালে হাওয়া আরও জোরদার হয়েছে । তাই তো আজ বসন্ত উৎসব কিংবা বর্ষামঙ্গল আজ বোলপুর থেকে বোস্টন বা ব্রিসবেন কিংবা ঢাকা থেকে ডালাস বা মন্ট্রিল ছড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক বাঙালির আড্ডায় আজ শুধু বাঙালি রাজা উজির নয়, দুনিয়াজোড়া রাজা উজির ‘মারা পড়ছে’; শুধু নিজের দেশ নয় অন্যের ‘দেশোদ্ধার’ও হচ্ছে; ‘গল্পের গরু আজও একইভাবে গাছে চড়ে বসছে’। দিনান্তরে, কালান্তরে রুচির পরিবর্তন এসেছে কিন্তু আজও কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, ঢাকা থেকে ডাবলিন শীতকালে বাঙালির হেঁসেলের গল্পে পিঠেপুলি, বৃষ্টিভেজা দিনে খিচুড়ি, সর্ষে ইলিশ আর চিংড়ির মালাইকারীর দ্বন্দ্ব উপস্থিত, উপস্থিত ‘কব্জি ডুবিয়ে খাবার’ গল্প। নতুন নতুন অনেক শব্দ ভিড়েছে বৈশ্বিক বাঙালির শব্দকোষে কিন্তু অভিমান, বিরহ হারিয়ে যায়নি কেননা আজও আমাদের কাছে ‘বিরহ মধুর’। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে , দেশী, প্রবাসী, অভিবাসী সব বাঙালির গল্প আজও দুঃখ কে মহিমাময় করে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখবার গল্প। আজও তেমনি ভাবে অপত্যের কিংবা অনুজের গল্পে অকল্যাণকর উক্তি এলে কিংবা অমঙ্গলের চিন্তা এলে গুরুজনেরা বলে উঠবেন ‘বালাই ষাট’। এই তো আমাদের ষোলাআনা বাঙালিয়ানার চিরন্তন গল্পের রূপরেখা। বেঁচে থাকুক আমাদের ষোলাআনা বাঙালিয়ানা তার সমকালীনতায় আর চলতে থাকুক আমাদের গল্প। আমাদের গল্পও না ফুরাক আর নটে গাছটিও না মুড়াক।

১ Comment

  1. স্বপন মাঝি

    ছোট বেলায় কিসসা শুনে নি, গল্প শুনে নি, ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে নি – এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। যারা পড়তে পারত না, তাদের জন্যও ছিল গল্পের আসর। গ্রামের কথা বলছি, শহরের নয়। লেখাটি পড়তে পড়তে চলে গিয়েছিলাম দেশের মাটিতে ।

    Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: