বাচ্চারা যেন ধোঁকা না খায়
আমরা বড়রা সব সময় আমাদের বাচ্চাদের সুন্দর স্বপ্নগুলোকে, দেশপ্রেমকে শেষ করে দেই; বুঝে অথবা না বুঝে। আপনারা যারা এই দেশের ভাল হোক চান না, তারা কি ভাবেন যে তাদের ছেলে মেয়েদের বাইরে পাঠিয়ে দেবেন, বা হালুয়া রুটির ভাগ পাবেন তাতেই চলে যাবে আপনাদের সন্তানদের, বা সমাজের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলে আপনাদের সন্তানদের কোন অসুবিধা হবে না? কয়জন পারবেন এটা নিশ্চিত করতে? যদি না পারেন? এত কোটি মানুষের তো এই দেশেই থাকতে হবে। তাহলে কেবল নিজ সুবিধা আর আত্বস্বার্থের চিন্তা না করে, কোন বিশেষ ব্যক্তি, দল, বা ভিন্ন দেশের অন্ধ ভক্তি, দালালি বাদ দিয়ে যে দেশটা আমাদের বাসস্থান, আমাদের পরিচয়, আমাদের সন্তানদের জীবন কাটবে যেখানে সেই বাংলাদেশের যাতে কোন বিপদ না হয়, দুরবস্থা না হয় সেদিকে সজাগ ও সচেতন থাকুন। মনে রাখতে হবে শাসক শ্রেণীতে যারা থাকে তারা নিজেদের স্বার্থের কথা ছাড়া আর কিছু ভাবে না, তারা সবসময় সাধারন মানুষকে, তরুণদের নানা ইস্যুতে বিভক্ত করে রাখতে চায়। তাই নিজেদের অধিকার রক্ষায় সাধারন মানুষ আর শাসক শ্রেণীর পার্থক্য বুঝতে হবে। আদায় করে নিতে হবে নিজেদের অধিকার। ভারত বিরোধিতা, বা পাকিস্তান বিরোধিতার নামে শাসক শ্রেণীর বিভিন্ন দল সাধারন মানুষকে ওই সকল দেশের মানুষকে ঘৃণা করতে শেখায়। বুঝতে হবে আমাদের দেশে আমরা আম জনতা যেমন আমাদের শাসক দল, সরকারের হাতে নিপীড়িত, বঞ্চিত, লুণ্ঠিত ধোঁকার শিকার তেমনি ওই দেশগুলোর সাধারন মানুষ, শ্রমজীবী মানুষেরাও ওই দেশের ক্ষমতাশালীদের দ্বারা নিষ্পেষিত। দেশে দেশে সাধারন, বঞ্চিত, মানুষের মাঝে এরা ঐক্য চায় না। তাই ধর্ম, জাতীয়তাবাদ আরও নানা ইস্যুতে এরা ঘৃণার চাষাবাদ করে। এক দেশের সাধারন, নিপীড়িত মানুষ আরেক দেশের সাধারন মানুষকে ভালবাসুক, তাদের মাঝে ঐক্য হোক এটা বিশ্বের এবং এদেশের শাসক শ্রেণী, ধনিক শ্রেণী, ও তাদের পয়সায় বা ফান্ডে যারা চলে তারা কখনও চায় না। এরা দেখবেন কখনও সাধারন মানুষের কস্টের কথা বলে না, দেশে দেশে সাধারন মানুষের যে হাল সেই কথা বলে না। এদের ফাঁদে আর পা দেবেন না। বিশ্বের সকল দেশের সাধারন মানুষ, নিপীড়িত মানুষ, বঞ্চিত মানুষ, শ্রমজীবী মানুষেরা একতা বদ্ধ হোক। মানুষ বুঝুক যে তাদের মুল শ্ত্রু কারা, তাদের দেশ ভিন্ন হলেও অভিযোগ, কস্ট ভিন্ন নয় কেন? তাদের কস্ট নিয়ে , আবেগ নিয়ে, রক্ত নিয়ে কারা খেলে, কারা ফায়দা উঠায়। বার বার সরকার পরিবর্তন হলেও, দল পরিবর্তন হলেও সাধারন মানুষের, শ্রমজীবী মানুষের দিন কেন বদলায় না? আমাদের রক্ত ছাড়া, আমাদের শক্তি ছাড়া কোন রাজনীতি হয় না, ক্ষমতার পালা বদল হয় না, অথচ বার বার আমরাই হয়ে যাই অসহায়। কেন? কারন আমরা সাধারন মানুষেরা, শ্রমজীবী মানুষেরা সচেতন নই। আমরা আমাদের শক্তি সম্পর্কে সচেতন নই, কারন আমরা সংগঠিত নই । তাই আজ একতা গড়ে তুলতে হবে দেশে দেশে সকল সাধারন মানুষ, বঞ্চিত মানুষ,, নিপীড়িত ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে। কেউ যেন আর সাধারন মানুষের মধ্যে ঘৃণা, হীনমন্যতা, হতাশা তৈরি না করতে পারে। যে কারনে আরব বসন্ত ব্যর্থ হল সেই কারণগুলো চিনহিত করুন, যাতে আমাদের এই জনজোয়ার, বাচ্চাদের জীবন ত্যাগ, আমাদের বাচ্চাদের স্বপ্ন, দেশপ্রেম ব্যর্থ না হয়। আমরা যেন বরাবরের মত কেবল আর কারও স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছি, আমাদের বোকা বানানো হয়েছে এই গ্লানি ও হতাশায় আগামী প্রজন্মকে হতাশ না করি, ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোর উদাহরণ না হই। রক্ত দিয়ে যদি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনই না আনতে পারি তবে সেই জীবনের বলিদানের সাথে বেইমানি করা হয়, এবং ভবিষ্যতে আর কোন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, জুলুমের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র, জনতা রুখে দাঁড়ানোর কারন বা সাহস হয়ত খুজে পাবে না, বিশ্বাস হারাবে যে সমাজ পরিবর্তন করা যায়, অধিকার আদায় করা যায়। আর এর পরিণাম আঁখেরে কারো জন্যই ভাল হবে না, এমনকি শাসক শ্রেণীর জন্যও না। যেমন বিএনপি দেখেছে গত পনের বছর তাদের উপর স্টিম রুলার চলেছে কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের জন্য জীবন বাজি রেখে এগিয়ে আসেনি তাদের আন্দোলনে। কারন সাধারণ মানুষ জানে যে এরাও তাদের ভাগ্য বদলাবে না, সিস্টেম বদলাবে না। এবার মানুষ ভেবেছে তাদের রাষ্ট্রের, সমাজের ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন আসবে, সেই প্রতিশ্রুতি আন্দোলনরত ছাত্ররা দিয়েছিল। আর তাদের ব্যক্তিস্বার্থ নেই, তারা মানুষের ভেতর জমে থাকা কথাগুলো সরাসরি বলেছিল, তারা মৃত্যুকে ভয় করেনি, তারা তখনও জানত না যে তারা জিতবে, তাই সাধারণ মানুষ তাদের বিশ্বাস করেছে, তাদের উপর আস্থা রেখেছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যদি সাধারণ মানুষের এই বিশ্বাস ভংগ হয়, তখন ক্ষমতার সিংহাসন থেকে পরে গেলে সে শাসক দলের জন্য আর সাধারণ ছাত্র-জনগন এগিয়ে আসবে না। যদি বার বার এই হতে থাকে যে ক্ষমতায় গেলেই সাধারণ মানুষের স্বপ্নের কথা, অধিকারের কথা ভুলে যান তবে সাধারণ মানুষও সেটা মনে রাখবে।
আশা করি মানুষ দিন দিন আরও সচেতন হবে, তার মুক্তির পথ একসময় না একসময় বের করবেই।
সাম্প্রতিক মন্তব্য