মহাজবিন
আজ মহাজবিন আমার কাছে এসেছিল, শেষবার-
ইমানুল ডাক্তারের মেয়ে,
যাকে আমি ছোটবেলা থেকে ভালবাসি।
বাবা আমার গঞ্জের মহকুমা অফিসের তহশীলদার ছিল,
আর আমাদের বাড়ী সুনামগঞ্জের ঘোষপাড়া।
সেই কবে কতকাল আগে স্কুল পালিয়ে
দুজনে গেছিলাম টেঙুর হাওরের পাড়ে,
কাকচক্ষু জলে ডুবিয়ে পায়ের পাতা,
আর ওর ডাগর চোখের তারায় চোখ রেখে
আবোল তাবোল কত গল্প করলাম, আর ওকে ভালবাসলাম।
“মহাজবিন মানে কি?” জানতে চেয়েছি একদিন
খালেদ মাস্টার কিছুতেই বলতে পারেনি মানে,
বাবাকে বলতে ভয় হলো,চুপ করে থাকলাম;
মহাজবিনকে আমি আরো বেশী ভালবাসলাম।
তারপর কেটে গেল কতকাল–
বাবা চলে গেল বিরানব্বই সালে, হিন্দুরা কোতল
হল দলে দলে, বিশাল দাঙ্গায়।
ভারতের কোন শহরে কোথায় কারা মসজিদ ভেঙেছিল,
তার দাম দিল বাবা জান দিয়ে ।
অনেকে পালালো পাড়া ছেড়ে,
আমি একা মাকে নিয়ে,আর ছিল মার নারায়ণশিলা ।
সবাই বলল “পালা, সময় থাকতে পালা।”
মহাজবিন দাঁড়ালো মাঝখানে এসে,আমার বাড়ীর
দরজায়, চোখ যেন আগুনের গোলা,
দাঙ্গাবাজগুলো ফিরে গেল ওকে শাসিয়ে,
“উঠিয়ে নিয়ে যাবো একদিন” বলে ।
ভয়ে ওকে আমি বুকে চেপে ধরলাম আর
পাগলের মতো এই মালাউন তাকে ভালবাসলাম।
উঠিয়ে নিয়ে গেল একরাতে, ওকে নয়,
এবার আমাকে —
ওরা ছিল আট দশ জন বাধা দিয়ে লাভ নেই;
সকালে আমাকে রেখে গেল বাসায়, অজ্ঞান আমি
গোপনাঙ্গ থেকে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল পাজামা
আমাকে খতনা করা হয়েছিল ।
সাড় ফিরে পেয়ে মুখের সামনে মহাজবিনের
মুখ দেখতে পেলাম আর ওর বুকে মুখ রাখলাম,
ওকে এই কাফের গভীর ভাবে ভালবাসলাম।
আজ সুরমার পাড়ে শুয়ে আছি আমি,
মানে শোয়ানো হয়েছে আমার নশ্বর দেহ,
ফুল দিয়ে ধীরে ধীরে ঢাকা পড়ছে আমার
বুক, পেট, গলা আরো সব অঙ্গ,এমন সময়
কোথা থেকে যেন কানে এলো শেষবার
এক পরিচিত পায়ের চপল শব্দ-
তারপর?
তারপর–
মহাজবিন বসলো এসে ধীরে ধীরে পাশে
চন্দন দিয়ে লেপে দিল আমার তলপেট,
তারপর আরো নীচে,যেখানে আমার সৃষ্টি থেকে
জন্ম নেবে এক সুন্দর সুঠাম ভবিষ্যত–
এই পাগল কাফের শেষবার তাকে ভালবাসলাম।
সাম্প্রতিক মন্তব্য