‘কালো’ বলাটা ভাষার প্রতীকী প্রয়োগ মাত্র
কালো আইন শব্দ প্রয়োগটায় অনেকের আপত্তি আছে। হয়তোবা এটাকে বর্ণবাদিতার নিদর্শন ভাবা হয়। কালো বা অন্য কোনো বর্ণ নিজে মন্দ নয়, এই যুক্তিও দেওয়া হয়।
কালো বললেই যে বর্ণবাদ বা কৃষ্ণাঙ্গবিদ্বেষ বা অবজ্ঞা বোঝাবে, ব্যাপারটা অত সরলরৈখিক না।
রঙের সাথে বিবিধ অনুষঙ্গ জড়িত থাকে। দৈনন্দিন নানা অভিজ্ঞতায়, সামষ্টিক নির্জ্ঞানে, সংস্কৃতিতে, শিল্পে, সাহিত্যে বিভিন্ন রঙের প্রয়োগ, ব্যঞ্জনা, প্রতীক নানাভাবে প্রকাশিত হয়।
কালোর বিপরীত সাদা। যখন আমরা বলি, ‘তিনি একজন সাদা মনের মানুষ।’ — তখন কোনোভাবেই তাকে শ্বেতাঙ্গের অনুষঙ্গে ভাবি না। সাদা-কালো-হলুদাভ-বাদামি যে-কোনো রঙের মানুষই সাদা মনের অর্থাৎ সহজ-সরল-অকপট-সৎ হতে পারেন। সাদা যখন সন্ধির, শান্তির, বিধবার, সাধুর, নার্সের, চিকিৎসকের পোশাকের বা পতাকার রং হয় তখনও তার ধারক যে কোনো বর্ণেরই হতে পারেন।
লাল রঙের প্রতীকী তাৎপর্য আছে, প্রথমত রক্তের কথা মনে করিয়ে দেয়, নির্দেশ করে বিপ্লব, বিপদ, এক ধারার সাধক, ফকির, রেডক্রস/ক্রিসেন্ট প্রভৃতির, তেমনি ট্রাফিক সিগনালের সবুজ আলো অভয় নির্দেশ করে, গ্রিনপিস বোঝায় প্রকৃতিকেন্দ্রিক সচেতনতা, শ্যামলিমা ইত্যাদি।
এরকমভাবে বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন প্রতীকী তাৎপর্য তৈরি করে, বিভিন্ন অনুষঙ্গ স্মরণ করিয়ে দেয়।
কালোর সাথে রাত্রির সংযোগ, তামসিকতার সংযোগ, অন্ধতার সংযোগ; প্রতীকীভাবে অজ্ঞানতার সংযোগ, গোপন-কুটিলতার সংযোগ, আচ্ছন্নতার সংযোগ। সেই অর্থেই কালো আইন হলো নিবর্তনমূলক আইন। কালো হাত মানে নিপীড়ক হাত। কালো টাকা মানে অন্যায়ভাবে অসদুপায়ে অর্জিত টাকা। কালো দিবস মানে অগ্রহণীয় কোনো ঘটনার স্মারক দিবস। কালো দিয়ে শোকও বোঝায়, আবার কালো পতাকা প্রতিবাদেরও জ্ঞাপক।
এইসব ‘কালো’র বিরুদ্ধে সচেতন থাকা জরুরি, কথা বলা দরকার, কার্যক্রমও অপরিহার্য। এই ‘কালো’ বলাটা কোনো বর্ণবাদিতা বা অন্য কোনো বিভ্রান্তি না। এটি ভাষার প্রতীকী প্রয়োগ মাত্র।
কঠিন কথা সহজ করে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নীল বললে প্রেমানুরাগ আবার বেদনাও।
অপ্রাসঙ্গিক কথা, বাংলাদেশ রাজনৈতিক কারণে, ডাক্তারদের আপত্তিতে নার্সদের সাদা পোশাক বদলে পিঙ্গল জাতীয় করে দিয়েছে।
রং আসলে খুব শক্তিশালী।
একটি শব্দের একমুখী অর্থের সৈনিকরা বেশ সক্রিয়, বহুমুখী অর্থের নাশ ঘটিয়ে চলেছে এরা। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। সৈয়দ তারিক ভাইকে ধন্যবাদ, বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য।