![অতল চাহনি](https://i0.wp.com/jolmati.com/wp-content/uploads/2024/04/Blue-Guest-Featured-Live-Event-Twitter-Post.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
অতল চাহনি
![অতল চাহনি](https://i0.wp.com/jolmati.com/wp-content/uploads/2024/04/Blue-Guest-Featured-Live-Event-Twitter-Post.jpg?resize=1280%2C640&ssl=1)
থার্মোমিটারে জ্বর নেই, অথচ গভীর জ্বরের ঘোরে তলিয়ে যাচ্ছে মৃন্ময়ী। ছেলেবেলায় দাদাবাড়ির দীঘির শ্যাওলা শ্যাওলা গন্ধমাখা জলের অতলে ডুবে যাচ্ছে সে বার বার। থেকে থেকে কাশির দমকে বুকটা চিড়ে যাচ্ছে তবু ঘোর কাটছে না। অসুখটা যেন এক তীব্র মাদকের মত গ্রাস করছে তাঁর সারা শরীর, মন। মাথার আর বুকের ভেতরটা একই সঙ্গে ভারী আবার শুন্য মনে হচ্ছে। জীবনের এক জটিল সঙ্কটের সময়েও মৃন্ময়ীর হৃদয় উদাস হয়ে আছে ফাগুনের বাতাসের মত। মাথার ভেতর কেউ তাঁকে বলছে “পুরুষ মানুষের মন বড় অদ্ভুত। প্রেমিকাকে পাওয়া হয়ে গেলে ভীষণ পাগলাটে প্রেমিকেরও গভীর প্রেমময় দৃষ্টি হারিয়ে যায়।“ জীবনে অনেক পুরুষ প্রেমের নিবেদন নিয়ে এসেছে তাঁর জীবনে। একজনের সাথে প্রেম হয়েছেও। অকস্মাৎ ঝড়ের মত এসে সব ওলটপালট করে দিয়ে গেছে। তারই সাথে বিয়েও হল। আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে এসে মনে হয় বোধহয় সে নিজেই কল্পনায় প্রেমের তাজমহল বানিয়েছিল। আসলেই কি তাঁর স্বামী তাঁর প্রেমিক? স্বামী কি কখনও প্রেমিক হয়? স্বামীর চোখে প্রেম থাকে না কেন তবে? স্বামী কেন গভীর চোখে চোখ রাখে না? “মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর নিতান্ত মাটির মনে হয় তাঁর সোনার মোহর।“ মৃন্ময়ীর মনে পড়ে যায় সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরানের গহীন ভিতর’ কবিতার লাইন দুটো। পুরুষরা প্রেমে পড়ে বটে তবে সেই প্রেম ধরে রাখতে পারেনা। “So this is not the question whether you love me or not, the question is ;how long,’ কোন এক সিনেমা বা নাটকে এই সংলাপটি শুনে সে ভেবেছিল,”তাইতো।“ তাই কোন পুরুষের স্তুতিবাক্য, প্রেমময় চাহনি, আবেদন, নিবেদন কিছুই আর তাঁর হৃদয়কে আন্দোলিত করে না। অথচ দু’দিন ধরে মনের মধ্যে কাঁটার মত খচ খচ করছে একটি পুরুষের চাহনি। এমন দৃষ্টি কখনও দেখেছে বলে মনে পড়ে না মৃন্ময়ীর। তাও এমন এক জায়গায়, এমন এক পেশার মানুষের মাঝে, কি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে! এর আগেও সে দু’বার গিয়েছিল তাঁর কাছে এক বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে। সেই ঝামেলা তিনি মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ক’মাস ভালই চলছিল সব। কিছুদিন হল আবার সেই বিপদ এসে ভর করেছে। সেই ভয় মৃন্ময়ীকে আবার নিয়ে এল তাঁর কাছে। এই ক’দিনের পেরেশানি আর ক’মাস আগে ঘটে যাওয়া সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি তাঁকে অস্থির করে রেখেছিল ওয়েটিং রুমে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁর ডাক এল। দরজায় একটু নক করে সে ঢুকল তাঁর কক্ষে। সেই হাসিমাখা মুখ।
“কেমন আছেন?” ভাল নেই বলতে গিয়েও মৃন্ময়ী বলে, “মোটামুটি।” তাকে বসতে বলতেই সে বসে পড়ে।
“কি, আবার ঝামেলা করছে?” “হুম,” হতাশ কণ্ঠে উত্তর দেয় সে। এরপর উনি কিছু বলেছিলেন কিনা মনে করতে পারেনা মৃন্ময়ী, শুধু বুঝতে পেরেছিল তিনি তাঁর কথা শুনবেন। সে তাঁর সমস্যার কথা বলতে থাকে। মানুষটির মিস্টি হাসিমাখা, ধীর-স্থির, শান্ত, নিস্পলক গভীর দৃষ্টি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। যতক্ষন মৃন্ময়ী কথা বলছিল সে দৃষ্টি এক পলকের জন্য কোথাও সরেনি। এক সময় তাঁর কথা থেমে যায়, উনি যেন এক গভীর ধ্যান ভেঙ্গে বাস্তবে ফিরে এলেন; আর মৃন্ময়ী ফিরল সেই ব্যখ্যাতীত অতল চাহনির কাঁটা নিয়ে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য