Select Page

এসকেপ

এসকেপ

লোকটাকে প্রথম দেখেছিলাম গুলশানে। এতটা খেয়াল করিনি। খেয়াল করার কথাও নয়। প্রথমত রাস্তায় কত লোকইতো রোজ দেখি, কে কাকে মনে রাখে। দ্বিতীয়ত পিঠের ব্যাগটা নিয়ে চিন্তা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটার গতি করা প্রয়োজন। তাড়াতাড়ি পা চালালাম। কিন্তু যখন তেজগাঁর রাস্তার দিকে মোড় নিলাম এক সেকেন্ডের জন্য পিছন ঘুরে তাকালাম, আরে লোকটাতো সমান দুরত্ব রেখে ঠিক পেছন পেছন আসছে। কে লোকটা? একটা ভয় মনে খচ্ করে উঠলো। যা ভাবছি তাই কি? তবে তো সর্বনাশ! না, তীরে এসে কি তরী ডুববে শেষে? না তা হতে দেওয়া যায় না। জোরে পা চালিয়ে একটা খালি রিক্সা পেয়ে গেলাম। ইনসাল্লা! দৌড়ে গিয়ে হাত দেখিয়ে রিক্সা থামালাম। ওকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে বললাম,
“চলো মহাখালী।”

“এইডা কি করলেন? আমারে জিগাইবেন তো? এখন যদি আমি না যাইতে চাই?”
“আরে ভাই চলেন না, যত ভাড়া লাগে পোষাইয়া দিমু। জলদি চলেন ভাই।”

আমি তাড়া লাগাই। মাঝামাঝি বয়েসি লোকটা নিম রাজী হয় গজ গজ করতে করতে। পেছন ফিরে তাকিয়ে নিশ্চিন্তি বোধহয় করলাম। না  মিছেই ভয় করেছি। লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না। রিক্সা ঘটর ঘটর করতে করতে তেজগাঁ পার হলো। ভিড়ের রাস্তা পেরিয়ে মহাখালী পাওয়ার আগে ওকে আবার দেখলাম। একটা বাসে জানালার ধারে বসে ছিল লোকটা। আমার রিক্সা পেরিয়ে বাস দ্রুতগতিতে চলে গেল। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক বাঁচা গেল, যা ভেবেছি তা নয় আদৌ। পায়ের কাছে রাখা বিশাল ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বসে রইলাম।

নিজের চিন্তায় বুঁদ ছিলাম। রিক্সা কখন রমনা পেরিয়ে মহাখালী পৌছে গেছে টের পাইনি। হুশ ফিরলো রিক্সাওয়ালার ডাকে।

“কুথায় নামবেন?”

চেয়ে দেখি মহাখালী বাস টার্মিনালের নীচে পৌছে গেছি। ঠিক জায়গা, এখান থেকেই কাল ভোরে বেরিয়ে যাব বিরতিহীন বাস ধরে। একেবারে খুলনা বা যশোর। কিন্তু এখন এই সন্ধ্যার মুখে তো বাস পাবো না। কোনো সস্তার হোটেলে রাত কাটিয়ে ভোরেই পালাবো। ব্যাগ পিঠে নিয়ে রিক্সা থেকে নামলুম। ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগোলাম। বাস গুমটির পাশের রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড়। সারি সারি সস্তার হোটেল।
রাস্তার মোড়ে একটা ছোটো সাইন বোর্ড চোখে পড়ল “মদিনা হোটেল, থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।” উপরে 786 লেখা দেখে এগিয়ে গেলাম।

“কয়দিন থাকবেন ভাবসাব?” উঁচু কাউন্টারে বসা লম্বা দাড়ি ভাবলেশহীন জিজ্ঞেস করলো।
“কাল সকালেই চলে যাব। রুমের লগে বাথরুম থাকা আছে ভাইজান?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“পঞ্চাশ টেকা বেশী লাগবো।”

ভাবলেশহীন দাড়ি নাম ঠিকানা লিখবার খাতা এগিয়ে দেয়। আমি নাম ঠিকানা লিখে রুমের দিকে এগিয়ে যাই।

রাত দশটা। খাওয়া সেরে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে রুমের বাইরে আসলাম। মনটা এখন ফুরফুরে লাগছে। উল্টো দিকের রুমের দরজা খোলা। কেউ এই মাত্র এসেছে হয়তো। কৌতুহল হল। খোলা দরজা দিয়ে তাকালাম। তাকিয়েই শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা পানি বয়ে গেল। এতো সেই লোকটা। এখানে ঠিক ফলো করে এসে গেছে। আর রক্ষা নেই। কি সর্বনাশ! লোকটা মোবাইল ফোন লাগাচ্ছে! নিশ্চয় পুলিশের লোক। এখনি পালাতে হবে। বাঁচতে হলে এক্ষুণি হোটেল ছাড়তে হবে।

আমি তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ব্যাগ পিঠে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলাম। হোটেলের বিল আগেই দেওয়া ছিল। দৌড়ে রাস্তা পার হতে গেলাম। উল্টো  দিক থেকে আসা গাড়ীর হেড লাইট চোখ ধাঁধিয়ে দিল। আমি পড়ে গেলাম। ব্যাগ ছিটকে পড়ল।

গাড়ী থেকে ইউনিফর্ম পরা ঢাকা পুলিশের দুই অফিসার নেমে আমাকে ওঠাতে গিয়ে চমকে উঠলেন।

“আরে! এ মাকড়াকে তো অনেকদিন থেকে খুঁজছি! চারটা ডাকাতি আর আজ সকালে সোনার দোকান লুঠ।” আধ খোলা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে,
“একেবারে বমাল সমেত। কিন্তু এ যে আল্লা না চাইতে পানি! এটা এখানে এলো কোথা থেকে মতিউর একে গাড়িতে উঠাও।” বলল এসআই সিরাজুল রহমান।

হোটেলে তখন দ্বিতীয় রুমের লোকটা নড়াইলের তার বাড়ীতে বিবিকে ফোন করে বলছিল,
“আমিনা, কাজ শেষ হয়েছে। সব পেমেন্ট পেয়ে গেছি। আপা ওরা নাই। নারায়ণগঞ্জ গেছে নাকি। এহন হোটেলে আছি। কাইল আমু।”

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার