Select Page

আধুনিকতা প্রসঙ্গে আফগানিস্তান

আধুনিকতা প্রসঙ্গে আফগানিস্তান

ভাবনা ছিল আফগানিস্তান নিয়ে আপাতত কিছু লিখব না। তারপরেও মনে হল কয়েকটি বিষয় নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। আফগানিস্তানে নারীদের আধুনিক বা পশ্চিমা শিক্ষা ও পোশাক পরা দেখলেই আমরা ধরেই নেই, এ সব কিছু সোভিয়েত সমর্থিত আফগানিস্তানের শেষ রাষ্ট্রপতি নাজিবুল্লাহর শাসনামলে চাপিয়ে দেয়া একটি ব্যবস্থা। এটা একদমই ভুল ধারণা।

মূলত ১৯১৯ সালে ৮ আগস্ট রাওয়ালপিণ্ডিতে ব্রিটিশ সরকার ও আফগানিস্তানের আমির শাহ আমানুল্লাহ খানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯২৩ সালে আমানুল্লাহ খান আফগানিস্তানে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। একই সঙ্গে তিনি সমাজ ও ভূমি সংস্কারে হাত দেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল, উৎপাদক কৃষকদের ভুমি মালিকানার স্বীকৃতি দেয়া। উৎপন্ন ফসলের পরিবর্তে নগত টাকায় রাজস্ব চালু করা। জমি কেনার ক্ষেত্রে নাগরিকদের অধিকার দেয়া। ভূমি সংস্কারের এই নতুন আইন প্রণয়নের ফলে আফগানিস্তানে যে সব মুসলিম ভূস্বামী ছিল, তাদের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে আসে। এরপরে ১৯২৭ সালে তিনি স্বপরিবারে একটা গ্রান্ড টুরে ভারত, মিসর, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, তুরস্ক ও ইরান হয়ে দেশে ফিরেন। ১৯২৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আবারো ভূমি সংস্কারে হাত দেন। এ সময় তিনি যে সব ভূস্বামী ও সর্দাররা কর রেহায়সহ নানা ধরণের বিশেষ সুবিধা ভোগ করতেন, তা বাতিল করে দেন। এবং রাষ্ট্রের সব নাগরিকদের জন্য একই মর্যাদা ও সবার জন্য একই সুবিধা চালু করার উদ্যোগ নেন। আইনের প্রয়োগের প্রশ্নে মোল্লা ও মৌলবিদের গুরুত্ব ও কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে ধর্মনিরেপেক্ষ আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেন। ধর্মনিরেপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা ও নারী শিক্ষার প্রচলন করেন। বিয়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সর্বনিম্ন বয়স ও পুরুষের বহু বিবাহ প্রথা বাতিল করে দেন। বাধ্যতামূলক পর্দাপথা উঠিয়ে দেন। তার আমলেই প্রথম ২০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বিদেশে পণ্য রফতানি শুরু হয়। তিনি আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সক্ষম প্রতিটি ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক সার্বজনীন সামরিক শিক্ষা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এবং অভিজাতকেন্দ্রিক শাসনের পরিবর্তে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক ও নিবার্চিত জাতীয় পরিষদ গড়ে তোলেন। তবে নারী প্রশ্নে তার যে সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে তার স্ত্রী রানী সুরাইয়ার অবদান ছিল বেশি।

রানী সুরাইয়া ছিলেন আফগানিস্তানের বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক মামুদ বেগ তারজির মেয়ে। মামুদ বেগ তারিজের নেতৃত্বে ১৯১৪ সালের দিকে আফগানিস্তানে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। এবং সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। মূলত শাহ আমনুল্লাহ খানের ভূমি নীতি ও সমাজ সংস্কার আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন যাবৎ যে ক্ষমতা কাঠামো গড়ে উঠেছিল, তা রক্ষকদের বিপক্ষে যায়। তারা বিদ্রোহ করে আমানুল্লাহর পতন ঘটান। এরপর সমাজ সংস্কারক হিসেবে ১৯২৯ সালে ক্ষমতা আসেন নাদির শাহ। তিনিও আর একটি সংবিধান চালু করেন। তার সময় বা ১৯৩০ সালে ডুরান্ট লাইন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ১৯৩২ সালে তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৩ সালে একজন সভায় বক্তব্য দেয়ায় সময় আততায়ীয় গুলিতে তিনি মারা যান। নাদির শাহর মৃত্যুর পর তার ছেলে জহির শাহ ক্ষমতায় বসেন। তখন তার বয়স ১৯ বছর। ১৯৩৩ সালেই তিনি লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ নেন। তিনিও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার সময়ে আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স ও আমেরিকদের আহ্বান করা হয়। আগে কাবুলের উচ্চ বিদ্যালয়গুলির মধ্যে হাবিবীয় ও ইন্তিকলালে পাঠ দান করা হত ফরাসি ভাষায়। আর নেজাত ছিল ব্রিটিশ হিন্দুস্তান পরিচালিত। নতুন নীতির ফলে হাবিবীয় ও ইন্তিকললা পরিচালনার দায়িত্ব পায় আমেরিকানরা। গাজী নামের আর একটা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে জার্মানিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গাজী পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ব্রিটেন। তাছাড়া ইতালিয়ানরাও কাবুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এখানে উল্লেখ করা দরকার কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মান, ফ্রান্স ও ইতালি যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল, তার সব কয়টিই ছিল বিজ্ঞান ভিত্তিক। তবে নাদীর শাহ আমল থেকেই আফগানিস্তানে আবার বংশপরাম্পরা রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয়।

এর মধ্যে প্রথম ছবিটি হলো শাহ আমানুল্লাহ খানের স্ত্রী রানী সুরাইয়ার। ছবিটি সাদাকালো থেকে রঙিন করেছে কেউ একজন। পাশের দ্বিতীয় ছবিটি হলো শাহ আমানুল্লাহর স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গে ইতালির রাজকুমারির। এটা রাজকুমারির বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি। তিন ও চার নাম্বার ছবি দুটি হলো জহির শাহর প্রতিষ্ঠা করা আরিয়ানা এয়ার কোম্পানির কর্মী ও ক্রুদের । পাচ নাম্বার গ্রুপ ছবিটি হলো আফগানিস্তানে প্রথম নারী ডাক্তারদের। ছবিটি ১৯৪২ সালের। ছয় নাম্বার ছবিটি হলো কাবুলের মালালি উচ্চ বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের। সাত নাম্বার ছবিটি হলো আমেরিকাদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জীববিজ্ঞান ক্লাশের। আট নাম্বার ছবিটি হলো আফগান নারীদের ঐতিহ্যবাদী পোশাক প্রদর্শনের। তার পরের ছবিগুলি হল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। উল্লেখিত এ সব ছবিগুলি কিন্তু কমিউনিস্ট শাসনামেলের বহু আগের।

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার