Select Page

হয়রানির বা নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের দোষারোপ করা প্রসঙ্গে

হয়রানির বা নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের দোষারোপ করা প্রসঙ্গে

জীবনটা সত্যি খুব জটিল। যারা খুব সহজ হিসাব নিকাশ করে এর উত্তর পেয়ে যান, তারা সত্যি বেশ ভাগ্যবান। তারা একটা কম্ফরট জোনে বাস করেন। তাই এদের চোখে জীবনটা একরকম আর যারা এই কম্ফরট জোনের বাইরের লোক তাদের চোখে জীবন, জগত, সংসার অন্যরকম নিশ্চয়। যেমন শিশু বয়সে ধর্ষণের শিকার হওয়া একজনের চোখে এই জগত সংসার যেমন মনে হবে, খুব আদরে আহ্লাদে অনেক নিরাপত্তার মধ্যে বাস করা একজন সুস্থ অভিজ্ঞতার মানুষের কাছে জগতটা অন্যরকম মনে হবে। তেমনি যাকে অল্প বয়স থেকে পরিশ্রম করে নিজের জীবনের সব দায়িত্ব নিতে হয়, সে জানে জীবন কত কঠিন। একেকজনের জীবনের সমীকরণ একেক রকম। নিজেরটা দিয়ে অন্যের জীবনের বিচার করা, আমি এমন কিন্তু ও এমন না কেন? এই প্রশ্নটা যারা অনুযোগ হিসাবে করেন, বা ভিক্টিম কে দোষারোপ করেন তারা বুঝতে চান না যে সবাই একই রকম শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের হয় না। সবার জন্ম হতে বড় হওয়ার পথ পরিক্রমা এক নয়। আরও অনেক অনেক রকম নির্ণায়ক কাজ করে একটা মানুষের মানসিক জগত গঠনে। কেউ ভীতু হওয়া মানে এর জন্য সেই দায়ী এত সহজ করে ভাবতে তারাই পারে যারা এই জগতের অনেক কিছু সম্পর্কে অজ্ঞ। ভীতু হলেই কারো সাথে এমনটা ঘটে, খারাপ মেয়ে হলেই তার সাথে এমন ঘটে, এই কথাগুলো যে মোটেই ঠিক নয় তা খোলা মন নিয়ে অনুসন্ধান করলে বুঝতে পারার কথা। ‘মেয়ে খারাপ তাই ওর সাথে পুরুষরা প্রশ্রয় পেয়ে এমন করে’ তাহলে মাদ্রাসায় বালকদের সাথে যে বলাৎকার হয় ওটা কি বালকদের খারাপ চরিত্রের জন্য হয় বা ওই বালকরা যৌন নিপীড়কদের প্রলুব্ধ করে বলেই ঘটে, তাই কি? অথবা বালকগুলো খুব ভীতু তাই ওদের সাথে এমন ঘটে, একটু সাহসী হলে এমনটা ঘটত না, তাই কি? মেয়েদের বা শিশুদের ভীতু হওয়ার কারণ কি?

যে সমাজে পরিবারই নারীর পাশে দাঁড়াতে চায় না, বা শিশুদের কথা বা অনুভূতি বা চাওয়া-পাওয়াগুলোকে পাত্তা দেয়া হয় না বা যেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই সেখানে অর্থনৈতিক ভিত্তি ছাড়া বা কোন রকম মানসিক ভরসা ছাড়া একটা নারী কি করে পরিবার ছেড়ে এসে একা দাঁড়াবে, কোথায় দাঁড়াবে? বা একটি শিশু কেন ভয় পাবে না?

সবাই প্রথমত বেঁচে থাকতে চায়। যে কারণে যত প্রগতিশীল বা তথাকথিত নারীবাদী হোক না কেন, এমন কোন লোকের বিরুদ্ধে সে মুখ খুলবে না যার পরিনামে তার জীবন বা তার পরিবারের জীবন প্রচণ্ড হুমকির মুখে পড়বে। ভিক্টিম যদি হয় কোন ক্ষমতাশালীর বিরুদ্ধে সেই ভিক্টিমকেও তখন এড়িয়ে যেতে চায় তার কাছের মানুষেরা হয়রানির ভয়ে। তবে কেন কোন সাধারণ মেয়ে ঘটনা ঘটার সময় বা তার পর পরই বলল না, কেন প্রতিবাদ করল না তখন, এই অভিযোগ করাটা আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো, সামাজিক  এবং অর্থনৈতিক অবস্থায় অবান্তর। তার উপর হাজারো বছর ধরে লালন করা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ফলে নারী ও পুরুষ উভয়ই সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিকতা হতে অনেক দূরে অবস্থান করে। কেবল পুরুষ নয় নারী নিজেও মনে করে সে পুরুষের অধঃস্তন। সে হল এই সমাজে ভোগ্য পণ্য। কেউ ভাবে একে ঢেকে-ঢুকে রাখতে হবে, আর কেউ ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে যত আকর্ষণীয় ভাবে একে উপস্থাপন করা যায়।

নিপীড়ক বা নিপীড়িত উভয়ই এই সমাজ হতে উদ্ভূত। এই সমাজের যে সিস্টেম তা দ্বারা সবাই প্রভাবিত। অসুস্থ সমাজে তো অসুস্থ ঘটনাই ঘটবে। একটা অসুস্থ সমাজের মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জানেই না যে সুস্থ, স্বাভাবিক মানবিক জীবন কি রকম হয়। নারী কোন পণ্য নয়, নারী একজন স্বাভাবিক মানুষ এই উপলব্ধি যতদিন না আসবে ততদিন নারীর মুক্তি নেই। এখন এই উপলব্ধি আসার জন্য কি করতে হবে বা সমাজের কি রকম পরিবর্তন দরকার বা  কেন কবে থেকে নারী স্বাভাবিক পূর্ণাঙ্গ মানুষের স্তর থেকে নেমে কেবল সন্তান উৎপাদন আর বংশ রক্ষার যন্ত্রে পরিণত হল সেটা জানতে হবে, বুঝতে হবে। আর সে জন্য সত্যানুসন্ধানী মন নিয়ে পড়তে হবে, জানতে হবে মানব সভ্যতার ইতিহাস।

১ Comment

  1. eklotan

    লেখা পড়ে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।

    Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: