Select Page

এই আমি

এই আমি

বেঁচে থাকার স্বাভাবিক পথ আমার জানা নেই । যা জানা নেই, তা নিয়ে কি কথা বলা যায়? এই প্রশ্নের ভেতর, তবুও. কিছু উত্তরের প্রত্যাশা থেকে যায়।
জানি না বললেও কিছুটা ‘জানা’ পাখা ঝাপটায়। পালকগুলো খসে পড়ে। হাতে নিয়ে নাড়তে-চাড়তেই প্রশ্নগুলো দাপিয়ে বেড়ায়।
অভিজ্ঞতা একটা ব্যাপার বটে। কারো কারো কাছে বলা বা ভাষার উপস্থাপনায় গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। কারো কাছে আঙ্গিক।
সময়টা বড় খারাপ। মূল সমেত গাছগুলো সব উড়ে যাচ্ছে, উড়ে যাবার সময় দু’একটা পাতা হাতিয়ে আর কী হবে? স্বস্তি? মিলতেও পারে। আসল আর নকল যখন একাকার তখন খোঁজাখুঁজির কি মানে থাকতে পারে? বড় কঠিন কাজ। কে চায় ওসব পথে পা বাড়াতে। সব আরামের বাজার যখন দোর গোড়ায়।
প্রশ্নহীন বেঁচে থাকার চেয়ে সুখের আর কী থাকতে পারে? উত্তরের আগাছা নেই। ঝকঝকে উঠোন। নর্তন-কুর্তন বেশ চলে।
আবার প্রশ্ন যদিবা থাকে, সে নিজের জন্য নয়। অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বেশ, বেঁচে থাকা যায়। সেই প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দিয়ে বাহবা মেলে। আর যদি ঘোড়ার লেজের মত উত্তরের কিছু সূত্র ধরিয়ে দেয়া যায়, সহজ হয়ে যায় রাতারাতি খ্যাতির শিখর।
দূরে, অনেক নিরাপদ দূরত্বে, নির্ম্মল আকাশ দেখতে দেখতে আর আসন্ন রোমাঞ্চকর মূহুর্ত্তের কবিতা আওড়ে নির্ম্মাণ করা যায় অনায়াস সুখের মডেল। ঝুট ঝামেলাহীন অথচ গভীরতায় মহান, নান্দনিকতায় অপূর্ব্ব, প্রতিবাদের ঝড়ো হাওয়া, তারপর স্ববিরোধী আইকনদের গালাগাল করে মুক্ত সমাজের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত, নতুন নতুন সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর সাথে গভীর রাতের শয্যায়।
ভোর হবার আগেই আবার স্বপ্নের খোয়াড়ে হানা দেয়, নতুন আইকন। অবাধ আর মুক্ত। সব মুক্তিই লুকিয়ে থাকে শয্যায়। সবচেয়ে সহজ মুক্তি বলেই হয়তো বা।
টাকার জোর নেই। তাই ঘেন্না।
ক্ষমতার জোর নেই, তাই ঘেন্না।
ঘেন্না হবার কথা।
সেই ঘেন্না কখন সোমরস, কখন নীল আলো হয়ে ফুটে, জানা হয়ে ওঠে না। জানতে গেলেই প্রশ্নগুলো অসভ্যের মত সব শান্তিকে নষ্ট করে দেয়। তখন শান্তি ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত প্রশ্ন, একা একা যায় নির্ব্বাসনে। যুক্তি, তাকেও কেনা যায়। টাকা আর ক্ষমতার চেয়ে বড় গুণ। ভাষা, যুক্তি, দর্শন, সব এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়, কর্ত্তাকে রক্ষার মহান ব্রত। কল্পিত মানুষ আর সমাজ কতটা দূরে জানাও হয় না।
দর্পনের চেয়ে প্রিয় এবং একই সঙ্গে ঘৃন্য আর কী থাকতে পারে? এটা শোভনীয় নিজের আদায়গুলো দেখে নেবার জন্য। বিচারের জন্য দূরে রাখাই নিরাপদ।
অতঃপর সবকিছু যুক্তিগ্রাহ্য আর আনন্দনীয়, ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধনকে দেখেও না দেখাই হয়ে ওঠে, সবচেয়ে আধুনিক দর্শন।
হ্যাঁ, দর্শনের এ পিঠে চড়লে আর কিছু থাকে না। সব ঝামেলা চুকে যায়। ভালটুকু, মন্দটুকু নয়। চোখ প্রয়োজনে অন্ধ করে দিয়ে, প্রগতিশীলতার ছোঁয়া রেখে যায় বিছানার চাদরে।
পরিবর্ত্তনের বাতাস বইবে, উম্মুক্ত বাতায়নে। মানুষ নেমে আসবে সবখানে। শুধু নিজের আসনটুকু থাকবে তাপানুকুল কক্ষে। আর এ বাতাস বইয়ে দেবার কৃতিত্ব, পুরস্কার দিতে নগরীর মডেল কন্যারা আসুক, হাতে হাতে ফুল।
বাতাসের এ জোর হাওয়ায়, উড়ে যায়, উল্টোমুখী যাত্রীরাও। তবে যুক্তি থাকে সাথে, চলেও সাথে সাথে। এ যেন আত্মরক্ষার বর্ম্ম।
টাকা নেই, ন্যাংটো হওয়া বা ন্যাংটো দেখা, দুঃস্বপ্ন।
ক্ষমতা নেই, ন্যাংটো হওয়া বা ন্যাংটো দেখা, দুঃস্বপ্ন।
মিডিয়া জগতের মোড়ল বা তার হাত পা লেজ নয়, ন্যাংটো দেখা বা হওয়া, দুঃস্বপ্ন।
জনপ্রিয় শিল্পী বা লেখক নয়, ন্যাংটো দেখা বা হওয়া, দুঃস্বপ্ন।
পটুয়াও নয়, সব দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্নের এক পাহাড়।
দেখতে গিয়ে প্রথম চোখে পড়ে বয়স। বাছাই। পণ্যের বাজারে বাছাই। বাছাই করতে করতে কপালের ভাঁজ ঢাকা পড়ে দক্ষ কারিগরের হাতে।
বাছাই করতে করতে চেখে দেখার অভিজ্ঞতাও হয়ে ওঠে এক মহাকাব্য।
আরও থাকে রাজপথ অথবা ফুটপাত, অথবা বলার ভঙ্গিতে এক ঘোর রহস্য, অচেনা অজানা রহস্য, ছোঁয়া যায় না, ধরা যায় না, বোঝা যায় না, নিজেকে কেমন নির্বোধ নির্বোধ মনে হয়। সবকিছু অধরা। দুঃসাহসী কেউ, ঘর ছেড়ে সেই বিছানার চাদরে বিপ্লবী।
বুলির বিষয়-বস্তুতে আগুন, সে নিজে জ্বলে না, জ্বালাতে চায় বলে কেউ কেউ জ্বলেও। সব জ্বালা মিটে গিয়ে সেই বিছানার চাদরে।
ফুটপাত, রাজপথ আর বর্ণিত মানুষ, সমাজ দূর গ্রহ নক্ষত্রের নানা নামে অঙ্কিত হয়ে যায়।
কেউ কাউকে বাঁচিয়ে রাখার, পথ দেখাবার মোড়ল নয়।
যারা দেখাবে বলে গলা ফাটিয়ে, সঙ্গম শিহরণে এখন ক্লান্ত, এবার মুক্তি আসবে অন্যরকম একটা সেমিনারে। আয়োজনের পেছনে থাকে আর এক রাতের স্বপ্ন, একেবারে নতুন।
বাজারে সবকিছু পণ্য হলেও, এমনকি প্রগতির সব ডাল পালা ছাতা নাতা পর্যন্ত, শুধু নীরবে, দূরের অচেনা নক্ষত্রগুলো তখনো রাতের অন্ধকারে ডুবতে দেখে তার মতই কেউ কেউ সেই ক্ষীণ আলোয় আসছে, এলি তো এলি, শেষ বেলায়। মাছেরা যখন সব দল বেঁধে সভ্যতার ভার সইতে না পেরে নিয়েছে বিদায়। আর মরে গেছে পানীয় জল। মরে গেছে মাটি। মরে যাচ্ছে মেঘ। মরে যাবে সব।
আর মানুষ মরবে পিঁপড়ার মত।
আমিও মরে পড়ে থাকবো পথে ঘাটে।
মৃত্যুই আমাদের এবং আমাদের এবং আমাদের তাবৎ কর্ম্মের ফল।
বড় দেরী হয়ে গেল।
আমার ফেরা হল না, সারাজীবনের স্বপ্ন আমার মাটি, আমার মাটির কাছে, আমিও পাপী। সমান তালে। খুনী অথবা সাক্ষী অথবা নিষ্ক্রিয়দের মত আমিও সমান ।
কালো কুচকুচে, একটা বিরাট ছায়া, আকাশ ছেয়ে যায়, আমার ঘাড়ে। মেরুদণ্ডের উপর গড়িয়ে যায় কতকগুলো পাথর। তাদের রঙও কালো। অদৃশ্য এক দানব অথবা পেত্নী। বিশ্বাস করি না। তবুও আমার পিছু পিছু।
আরাম খুঁজতে গিয়ে সব আজ হারাম করে দিয়েছি। এমনকি নিজের মাটি পর্যন্ত। আজ পালাবার পথ নেই।
নোনা জল এলো বলে। আর পাখিরা তো চলেই গেল। কোথায় কেউ জানে না। এখন শুধু নোনা জলই পাবে।
আমি যতদূর যাই ছায়াটা আমার পিছু ছাড়ে না। কালো পাথর মেরুদণ্ড বেয়ে এবার ওঠে আসে ঘাড়ে।
মিথ্যা, মিথ্যাই। তবুও আজ তা অন্যরকম। আগেকার দিনের মত নয়, অন্তত। এখন চেনা যায় না। ঘোর সন্দেহ জাগে। তারপর মনে হয় সত্য। তেলেসমাতি বটে। একজোট সব খবরের কাগজ আর বেতার আর টেলিভিশন। এক্কাট্টা। কেমন করে যমজ হয়ে যায়। পেছনের কলকাঠি চোখে পড়ে না। শুধু রঙিন ছবি আর ভারি কণ্ঠের গমগমে প্রতিধ্বনি, বাতাসে ধুলোবালির মত ভেসে বেড়ায়।
আর তার প্রতিষেধও আছে, পাতায় পাতায় অথবা পর্দায়। ব্যাঙের মত লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ানো একদল মস্তিষ্কহীন আকর্ষণীয় শরীর। চোখ ধাঁধানো। নেশা ধরে। বাথরুমের বেগ পায়। তবুও চোখ সরে না। আর কি-না হতে পারে? চারদিকে কা কা চিৎকার ওঠবে, কান পাতা দায় হবে। অক্ষমদের আক্ষেপ। আঙুর ফল টক।
মাঠ দখলের খেলায় সবাই সমান খেলোয়াড় নয়। তার উপর তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখার দর্শক তো রয়েছে। আর অক্ষম শুধু, অক্ষম আক্রোশে পালিয়ে পালিয়ে, শেষ পর্যন্ত প্রিয় মাছগুলোর মত নিখোঁজ, এই আমি।

৩ Comments

  1. eklotan

    এমন করেও লেখা যায়!! দুর্দান্ত লেখনি।

    Reply
    • স্বপন মাঝি

      আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় যার-পর-নাই উৎসাহ বোধ করছি।

      Reply
  2. eklotan

    নুতন কিছু আসতেছে না কেন?

    Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: