Select Page

পাঠ প্রতিক্রিয়া: রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি

পাঠ প্রতিক্রিয়া: রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি

একটি পুস্তক পাঠ করে, ভাললাগা, না-লাগার কথা বলা যায় অনায়সে। কারণটা মনে হয় খুব সহজ। আমাদের মনোজগৎটা যেভাবে তৈরী হয়ে থাকে নানা ঘটনা-অভিজ্ঞতায়, তার আলোকে এই ভাললাগা আর না-লাগাটা সহজে নিজের ভেতর কাজ করে। নিজের অভিজ্ঞতার সাথে না মিললে, দুর্বোধ্য বলে পাশে রেখে দিই।
কিন্তু পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য, আরো কিছু জানা লাগে। সেটা অনেক কঠিন কাজ, সন্দেহ নেই।
আমি সহজ পথেই যাচ্ছি। অর্থাৎ ভাললাগা, না-লাগার পথে।
রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি‘, লেখক কুলদা রায় এবং এম আর জালাল

‘রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি’, বইটি পড়ার আগে, গ্রন্থাননে (ফেইসবুকে) একজনের সাথে আমার তর্ক হয়েছিল। তিনি পেশায় খুব সম্ভবত সাংবাদিক। তার ভাষ্যমতে রবীন্দ্রনাথ প্রজা পীড়নকারী, মুসলিম বিদ্বেষী। আমার পড়ার দৌড় খুব খারাপ। টুকটাক যা-ই পড়েছিলাম, মনে হয়েছিল, কথাটা ভুল। রবীন্দ্রনাথের মূল লেখা থেকে দু’একটা উদাহরণ দিয়েছিলাম। কোরবানি বন্ধের দাবী জানিয়েছিল হিন্দু প্রজারা । রবীন্দ্রনাথ নাকচ করে দিয়েছিলেন। ম্যালেরিয়া রোগ নির্ম্মূলের জন্য তাঁর উদ্বেগ, উদ্যোগ ইত্যাদি। বলেছিলাম, সময় পেলে আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করে লিখব।
কিন্তু সেই লেখার আর প্রয়োজন রইল না। কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই বলে দিতে পারি, ‘রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি’, বইটি শ্রমসাধ্য, তথ্যপূর্ণ্য। উভয় লেখক যে বিপুল শ্রম-সময়-মেধা ব্যয় করেছেন- এক কথায় অকল্পনীয়। কথাটা বললাম, এটি লেখার জন্য যে বইগুলো উনাদের পড়তে হয়েছে, তা আমার পক্ষে এক জীবনে সম্ভব নয় , অন্য অনেকের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব।

বইটি পড়তে পড়তে চারটি বিষয় আমার মনে দাগ কেটে গেছে।

এক.
রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলেন- ধর্ম্মের গঞ্জিকাসেবীদের এই প্রচারটি অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয় শুধু, শিক্ষকদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তি তো আছেই।
লেখকদ্বয়, বিভিন্ন তথ্যসূত্র উল্লেখ করে দেখিয়েছেন, এটা ছিল মিথ্যা প্রচার। উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই প্রচারের পটভূমি, এবং কারা, কেন এখনো সক্রিয়, তাও লেখকদ্বয় দেখিয়ে দিয়েছেন।
১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার কথা বলা হয়, সেদিন রবীন্দ্রনাথ আসলে কোথায় ছিলেন।

“১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠি লিখেছেন জগদানন্দ রায়কে। জগদানন্দ রায় বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক, রবীন্দ্রনাথের পুত্রকন্যাদের গৃহশিক্ষক ও শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক।
সেদিন ছিল বৃহষ্পতিবার। চৈত্র ১৫, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রবীন্দ্রনাথ চিঠিটি লিখেছেন শিলাইদহ থেকে। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন –
“কয়দিন এখানে এসে সুস্থ বোধ করছিলুম। মনে করেছিলুম সেদিন যে ধাক্কাটা খেয়েছিলুম সেটা কিছুই নয়। সুস্থ হয়ে উঠলেই অসুখটাকে মিথ্যা মনে হয়। আবার আজ দেখি সকাল বেলায় মাথাটা রীতিমত টলমল করচে। কাল বুধবার ছিল বলে, কাল সন্ধ্যাবেলায় মেয়েদের নিয়ে একটু আলোচনা করছিলুম – এইটুকুতেই আমার মাথা যখন কাবু হয়ে পড়ল তখন বুঝতে পারচি নিতান্ত উড়িয়ে দিলে চলবে না।”
পৃ ১৬

রবীন্দ্রনাথ, তাঁর লেখায় স্থান এবং তারিখ উল্লেখ করতে ভুলতেন না। এরপর ঐ সময়ে লেখা ১৭ টি কবিতা ও গানের স্থান উল্লেখ করা হয়েছে শিলাইদহে।
কোন রকম তথ্য-তালাশ না করে, অনেকে বিদ্বেষ পোষণ করেই ক্ষান্ত নয়, প্রচারেও নেমেছে কেউ কেউ। এর মধ্যে সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত অংশও রয়েছে।

দুই.
মুসলিম বিদ্বেষী বলেও অনেকে প্রচার করে থাকেন রবীন্দ্রনাথকে। মূল লেখাগুলো পড়লেও এমন সাম্প্রদায়িক কথা বলা এদের পক্ষে সম্ভব হতো না। অথবা এরা জেনে বুঝেই রবীন্দ্রনাথ যা নন, তাঁকে, তা-ই বানিয়ে, বাংলাদেশ থেকে নির্বাসনে পাঠাতে চাইছে। দুঃখজনক হল, এই প্রচারে অনেক প্রগতিশীলও বিভ্রান্ত।
হিন্দু মুসলিম সম্পর্ককে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে দেখতেন, বইটি থেকে দু’একটি উদ্ধৃতি দেয়া যাক।

“ভারতবর্ষের কল্যাণ যদি চাই তাহলে হিন্দু-মুসলমানে কেবল যে মিলিত হতে হবে তা নয়, সমকক্ষ হতে হবে। এই সমকক্ষতা তাল ঠোকা পালোয়ানীর ব্যক্তিগত সমকক্ষতা নয়, উভয় পক্ষের সামাজিক সমকক্ষতা।”
পৃ ২৫০

অন্যত্র শিক্ষার প্রশ্নে কবি বলছেন,

“পাঠ্যপুস্তকে মুসলমান মনীষীদেরও কথা থাকতে হবে – মুসলমানদের ধর্মের বাণীও থাকতে হবে – কেবল হিন্দুর বা খ্রিস্টানদের বাণী থাকলেই চলবে না। সেটা শুধু মুসলমানদের জানলেই হবে না – হিন্দুকেও জানতে হবে। কারণ নিজের শাস্ত্র পড়ে পণ্ডিত হওয়ার দিন বদলে গেছে। এখন জানতে হবে সকল শাস্ত্র – সকলের শাস্ত্র।”
পৃ ৩৩২

আমাদের বুঝে নিতে কষ্ট হয় না, বিজেপি কেন রবীন্দ্রনাথকে বর্জ্জন করতে চাইছে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও আক্রান্ত।

তিন.
প্রজা বিরোধী। এই অভিযোগটি যখন কোন অন্ধবিশ্বাসী করেন, তখন, তার কারণটা বুঝতে পারি। কিন্তু যখন একজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্ম্মী, অথবা; সাংবাদিক করেন, তখন কারণটা বুঝার জন্য থামতে হয়। এটা কি সেই, যা, তাকে পুরনো চিন্তার শৃঙ্খলে আটকে রেখেছে? বেরোতে পারছে না। অনুসন্ধান করে সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়োজনও অনুভব করে না!

বইটি থেকে কিছু অংশ:

দ্বারকানাথের আমল থেকে সম্ভ্রম ও জাতবর্ণ অনুযায়ী পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে থাকে বিভিন্ন ধরনের আসনের বন্দোবস্ত। হিন্দুরা চাদর-ঢাকা সতরঞ্জির উপর এক ধারে, তার মধ্যে ব্রাহ্মণের স্থান আলাদা। মুসলমান প্রজাদের জন্য চাদর ছাড়া সতরঞ্জির উপর-অন্যধারে। সদর ও অন্য কাছারির কর্মচারীরা নিজ নিজ পদমর্যাদা অনুসারে বসেন পৃথক পৃথক স্থানে। আর জমিদার বাবুমশাইয়ের জন্য ভেলভেট মোড়া সিংহাসন। এখানে বৈষম্যপূর্ণ জাতপাতের চূড়ান্ত ব্যবস্থা করা হয়।
বাবুমশাই রবীন্দ্রনাথ এই বৈষম্যপূর্ণ আসন ব্যবস্থা মানলেন না। তিনি নায়েব মশাইকে বললেন, পুণ্যাহ জমিদার ও প্রজার মিলন অনুষ্ঠান। সুতরাং এই শুভ দিনে সকলের আসনেও মিলন থাকতে হবে। তিনি নায়েবকে বললেন, সব আসন তুলে দিন। হিন্দু-মুসলমান, ব্রাহ্মণ-চন্ডাল সবার জন্য একই ধরনের আসনের ব্যবস্থা করুন।”
পৃ ১৯২

এখানেই থেমে যান নি।

“এ সময়ে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গে তাঁদের জমিদারি এলাকায় গ্রাম পুর্নগঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করলেন। এ কাজে কিছু স্বদেশী আন্দোলন ফেরত যুবককে কাজ লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে ভূপেন্দ্রনাথ অন্যতম।–
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসাবে কৃষি জরিপের কাজ দিয়েছেন ভূপেন্দ্রনাথকে। এইসব জরিপ তথ্য বিশ্লেষণ করে এলাকার কৃষি ও কৃষকের সমস্যা নিরুপণ করবেন। তারপর সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে । ওই চিঠিতে কবি আরো লিখেছেন, আমি যে গ্রামে গ্রামে যথার্থভাবে স্বরাজ স্থাপন করতে চাই – খুব শক্ত কাজ অথচ না হলে নয়। অনেক ত্যাগের আবশ্যক – সেইজন্য মনকে প্রস্তুত করচি – রথীকে আমি এই কাজে লাগাব – তাঁকেও ত্যাগের জন্য ও কর্ম্মের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। নিজের বন্ধনমোচন করতে না পারলে আর কাউকে মুক্ত করতে পারব না। “
পৃ ৩৬০

প্রজাদের হিত সাধনে, হিতৈষী সভা প্রতিষ্ঠা করেছেন, কৃষি ব্যাংক স্থাপন করে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন, নাম মাত্র সুদে। নিজের ছেলেকে ব্যারিস্টারি (তখনকার দিনে এটা ছিল অতি সম্মানের ) না পড়িয়ে , পাঠিয়েছেন কৃষি বিদ্যা শিখে আসতে।

চার.
জাতীয় সঙ্গীত এবং গানের সুর নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, হচ্ছে – আলোচনা করা হয়েছে নির্মোহভাবে। আমার সোনার বাংলা প্রসঙ্গে বইটিতে বলা হয়েছে:

“বলেন্দ্রানাথ গগন হরকরার গানটির কথা এবং রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা রচনার ইতিহাসটি বলছেন। এখানে কোন তথ্যই লুকানো হয় নি। রাহাজানি করলে গোপন করার বিষয় থাকে। সেটা তো করা হয় নি। রবীন্দ্রনাথ নিজেও এই গানটির সুর কোথা থেকে নিয়েছেন – তা অকুণ্ঠ চিত্তে বলেছেন। সেগুলো ঠাকুরবাড়ির লোকজনই গেয়েছেন। লালন করেছেন। মূল গান এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট গান – সবই রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় গীত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ কখনো কোথাও বলেছেন – আমার সোনার বাংলা গানটি তাঁর নিজের সুর করা।
সঙ্গীতের বিষয়টিই সেকালে এরকম ছিল। রজনীকান্তের কোনো কোনো গান আছে – যেগুলো রবীন্দ্রনাথের গানের সুরকে হুবহু নেওয়া হয়েছে। সেগুলো তিনি রবীন্দ্রনাথকে গেয়েও শুনিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ শুনে তারিফ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ, ডিএল রায়, অতুলপ্রসাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায় রামপ্রসাদের সুর থেকে গান করেছেন। নজরুল তাঁর গজল গানের সুরগুলো পারস্য গজল থেকে নিয়েছেন। সেগুলোকে কেউ রাহাজানি বলে নি। “
পৃ ৩৯৭

সত্যমিথ্যা যাচাই না করে, যারা অপপ্রচারে লিপ্ত, তাদের হয়ত একটা উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু এমন অনেক আন্তরিক চিন্তক-পাঠক আছেন, যাদের কেউ কেউ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত। তাঁদের জন্য এই বইটি দারুণ কাজে দিতে পারে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত এত লেখা আছে, কোনটা রেখে, কোনটা পড়ব – সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই বইটি পড়লে মোটামুটি একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যেতে পারে, সন্দেহ নেই।
শেষ করি এই বলে, আমাদের দেশের অধিকাংশ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদীর বড় সমস্যা হল, তারা দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেন বটে; কিন্তু বিচার করতে বসলে ভাববাদী হয়ে যান।

৮ Comments

  1. eklotan

    পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়ে আমার তৃপ্তি পুরোপুরি মিটল না। মনে হলো যেন মাঝি দাদা’র আরো কিছু লেখার ছিল। উদ্ধৃতি ধরে ধরে লেখার কারণে মনে হচ্ছে, বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই বোধ হয় উক্ত বইটা রচিত। যদিও পড়ি নি; তাও মনে হচ্ছে বইটি আরো ব্যাপক অর্থে লিখিত। শিরোনাম যেমন বইটার ব্যাপকতা তেমন বোধ হয়।

    আজকাল ভালো বই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। লেখকের সাথে আলাপচারিতার সুবাদে বইটির নাম আগেই জেনেছিলাম। এবার বই এর উদ্ধৃত অংশ পড়া গেলো। রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে জানার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে গেলো। বইটি সংগ্রহে রাখার মতন।

    Reply
    • স্বপন মাঝি

      আমি যে চারটি বিষয় উল্লেখ করেছি, তার কারণ এ নিয়ে খুব বাজে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাই। আপনি যথার্থই বলেছেন। বইটিতে আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনায় করা হয়েছে। মোটামুটি একটা সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে।
      আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

      Reply
  2. রাম শঙ্কর ভট্টাচার্য্য

    বই আলোচনায় মোটামুটি একটা ছবি দেওয়া যায়, পুরো বই দেওয়া যায় না। বেশ লাগল।

    Reply
    • স্বপন মাঝি

      পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। নিয়মিত পাব, আশা করতেই পারি। ভাল থাকবেন।

      Reply
      • sumona shilpi

        বই আলোচনা ভালো লেগেছে।

        Reply
        • স্বপন মাঝি

          জেনে প্রীত হলাম।

          Reply
  3. brotee mukhopadhyay

    ভাল লাগল পড়ে। তবে রবিঠাকুরবিরোধীরা কি আর যুক্তিতথ্য গ্রহণ করবে? তাদের আলাদা ডিজাইন থাকে, যেমন আরেসেসের আছে।

    Reply
    • স্বপন মাঝি

      আমাদের কাজ , আমরা করে যাব। সত্য প্রকাশ। যে সত্য, যেখানেই সত্য প্রকাশ করবে, আমরা অংশ নেব। হাল ছেড়ে দেব না। পাশে থাকুন। সহায় হোন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

      Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: