আস্তিক্য-নাস্তিক্যের সাথে নীতিবোধ আর নারী-পুরুষ সম্পর্ক বিষয়ে
( তাত্ত্বিকতায় না গিয়ে সহজ কথায়)
ফেসবুকে একজনের পোস্ট দেখলাম কোন এক ব্যক্তির একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক করা বিষয়ে। এই ব্যক্তিকে প্রতারক চিহ্নিত করে এও জানানো হলো ইনি নাকি নাস্তিক এবং সেই সাথে এমন সিদ্ধান্তও টেনে ফেলা হলো যে নাস্তিক্যবাদ চর্চাকারীদের এরকম ক্রিয়াকলাপের কারণে এই ধারার চর্চার প্রতি মানুষের অনাস্থা চলে আসছে। পোস্ট থেকে বোঝা যায় পোস্টার নিজেও নাস্তিক এবং মনে করেন যে আস্তিক বা ধর্মানুসারী মানুষেরা চরিত্রহীন / বহুগামী হলে অবাক হবার কিছু নেই যেহেতু তাদের অনুসরণ করা সাধু-পয়গম্বর-দেবতা-মহাপুরুষগুলো সবাই কমবেশী চরিত্রহীন / বহুগামী। কিন্তু নাস্তিকরা কেন অমন হবেন, এখানেই পোস্টকারীর ক্ষোভ! প্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু ভাবনা জড়ো করে পোস্ট করতে গিয়েই দেখি ঐ পোস্ট আর নেই, এমনকি মনে হচ্ছে পোস্টকারীও হয়তো ফেসবুক রাডারে ব্লক্ড!
সেই পোস্টে উল্লেখিত ব্যক্তিচরিত্র বা পোস্টকারী নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। তবে মনে করি কিছু জরুরী দিক নিয়ে ভাবনার, অনুসন্ধানের দরকার আছে। তাই মূল পোস্ট না থাকায় আমার প্রতিক্রিয়ায় অংশটা এখানে দিলাম।
প্রতারণা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সঠিক, তবে সেই কারণে যে মত দেয়া হয়েছে তা সঠিক বলে মানতে পারছি না। নাস্তিক্যবাদ চর্চাকারীদের এরকম ক্রিয়াকলাপের কারণে এই ধারার চর্চার প্রতি মানুষের অনাস্থা চলে আসছে, সত্যিই কি বিষয়টা এভাবে বলা যায়?
কিছু ভাবনা, জিজ্ঞাসা শেয়ার করা যাক। আপনাদের মতামত আশা করছি।
- যদিও কাম্য তবুও বাস্তবে আস্তিকতা , নাস্তিকতার সাথে নীতিবোধ, দায়িত্বশীলতার সম্পর্ক নেই।
- দুই অংশেই শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত মানুষ রয়েছে।
- জেনে বুঝে নাস্তিক হবার জন্য কাণ্ডজ্ঞান, হাইস্কুল লেভেলের জ্ঞানই যথেষ্ট
- সত্য জানার ইচ্ছা, যৌক্তিক চিন্তা থাকলেই সমাজ-রাজনীতি , মনস্তত্ত্ব বুঝা হয়ে যায় না। নারী-পুরুষের সম্পর্ক নাস্তিকতা চর্চার অঙ্গ হয়ে উঠে নি, অন্ততঃ সেভাবে কোন পৃথক সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠে নি। যদিও ফেমিনিজম এর সাথে নাস্তিকতার যোগ আছে।
- যে নারীরা প্রতারিত হচ্ছে তারা কি নাস্তিক? তাদের কি নিজস্ব বোধ বুদ্ধি নেই?
- প্রতারণার সাথে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার কোন যোগ নেই
- নারী-পুরুষের সম্পর্ক, বহুগামিতা ( কোন প্রকার প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে, নারী পুরুষ দুই পক্ষেরই , শুধু পুরুষের নয়) বিষয়ে সমাজ কোন পথে যাবে বা যাওয়া উচিত তার সুরাহা হয় নি। এই বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনার পরিবেশ আমাদের উপমহাদেশ এখনও তৈরী হয় নি। জেনে বুঝে সম্পর্কে জড়ালে ফলাফলের দায় পরিণত বয়স্ক মানুষের( পুরুষ বা নারী)-ই। ইজমের নয়।
- মার্কসবাদী ধারার আন্দোলন নাস্তিকতা, নারী পুরুষের সমাধিকার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলেও, যৌন সম্পর্কের দিকটা খুব বেশী আলোচনা করে নি, যদিও প্রচলিত নারী-পুরুষ ভিত্তিক যৌথ সংসার ভেঙে পড়বে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়, মার্কসীয় সাহিত্যে।
- সুস্পষ্ট প্রতারণা, অপরিণত বয়স্কদের কিম্বা অর্থনৈতিক সামাজিক অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে করা হলে অবশ্যই ঘৃণ্য। এসব কারণে যৌক্তিক ভাবনা চর্চাকারীদের ঢালাওভাবে দোষী করলে আখেরে সুবিধা হবে মধ্যযুগীয় ভাবনার অনুসারীদেরই।
- চেষ্টা করলাম মতামত দেবার, রোজা লুক্সেমবার্গদের না টেনেই। বিষয়টি জরুরী মনে করেই।
যে আর্থ-সামাজিক কাঠামোর মধ্যে একজন আস্তিক বাস করেন, সেই একই কাঠামোর মধ্যে একজন নাস্তিকও বাস করেন। সমাজ দেহের পুঁজ , নাস্তিক-আস্তিক বিচার করবে না। এমন কি যারা এই কাঠামোর ভাঙ্গার ব্রত নেন, তারাও কি নীতি-নৈতিকতার মান সব সময় বজায় রাখতে পারেন? এটা সম্ভব নয়। নাস্তিক মানেই মহান কিছু ভাবনাটাই তো ভাববাদী। আর সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরকীয়া বলে কিছু নেই। একটা অভাব অনুভূত হলেই , একজন নর অথবা নারী সম্পর্কের মধ্যে থেকেও অন্য কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মন্দ কিছু নেই। অনেক ভাল মানুষকে দেখেছি, একটা সম্পর্কে থেকেও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে। তারমানে এই নয় সম্পর্কের বাহানা করে, একজন আরেকজনকে ব্যবহার করবে। মানুষ ব্যবহার যোগ্য কোন সামগ্রী নয়। যে সম্পর্কের মধ্যে একজন শিকার, অন্যজন শিকারী, কোনরকম উচ্চ মার্গীয় আলোচনা ছাড়াই বলা যায়, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এই দোষে যে কেউ দোষী হতে পারে। নাস্তিক হওয়ার জন্য বিরাট বিরাট বই পড়ার দরকার নেই, আসমানি কিতাবগুলোই যথেষ্ট।