Select Page

নপুংসক লেখক-বুদ্ধিজীবী আর নপুংসক শিক্ষিত জনগোষ্ঠি – কোনটা কারণ, কোনটা ফলাফল?

নপুংসক লেখক-বুদ্ধিজীবী আর নপুংসক শিক্ষিত জনগোষ্ঠি – কোনটা কারণ, কোনটা ফলাফল?

সেদিন নতুন পুরনো বন্ধুদের আড্ডায় যা হয় আর কি , দেশের সমস্যা নিয়ে বাতচিৎ হচ্ছিলো। সবাই শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত। লক্ষ্য করলাম বিভিন্ন দল (ক্ষেত্রবিশেষে নিজেদের পছন্দের দল ছাড়া) গোষ্ঠির সীমাবদ্ধতার খোঁজখবর অনেকেই রাখেন। সাধারণ ঐক্যমত হলো রাজনীতির সবটাই হলো ব্যবসা, ব্যক্তিগত ধান্দা। আর লেখকরা না কি সব নপুংসক, কারও সাহস নেই বিদ্যমান মূল সমস্যাগুলো নিয়ে লেখালেখির, উপরিভাসা কিছু সমালোচনা হয় বটে , সবই লোকদেখানো!

তো এখানে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠির, আমাদের, দায় কী? জানা গেল আমাদের কেন দায় নেই। রাজনীতিকদেরই দায় সব, আর দায় লেখক বুদ্ধিজীবীদের — যদিও আমরা জানি তারা সব বিক্রি হয়ে গেছে, দালাল, ধান্দাবাজ, নপুংসক ইত্যাদি! অর্থাৎ আমাদের মু্ক্তি বা উন্নয়ন সম্ভব না; যতক্ষণ না ভালো রাজনীতি , সাহসী লেখক বুদ্ধিজীবীর দল আমাদের মুখে মুক্তির ভাষা-চাহিদা-আন্দোলনের দুধের বোতল তুলে দেয়। কোথা থেকে উদ্ভব হবে এসব শুভ রাজনীতিক-বুদ্ধিজীবী-লেখক? এরা কি মনুষ্য প্রজাতির ভিন্ন কোন ধারা? সমগ্র শিক্ষিত সুযোগপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠি যদি তার নিজেরই অস্তিত্বের সমস্যা নিরসনের দায় কোন রেডিমেড দল-গোষ্ঠির হাতে ছেড়ে দেয়, তবে তো তারা রাজনীতি-বুদ্ধিজীবীতার ব্যবসায়িক ধারাকেই মেনে নিচ্ছে, তাই নয় কি?

রণাঙ্গন হতে পারে মাঠ, লেখা, ভাবনা প্রকাশের সকল মাধ্যম। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা অনুসন্ধানের ধারাটা তো অন্তত: চালু থাক। শিক্ষিত জনগোষ্ঠির অবশ্যই নৈতিক দায় থাকা দরকার। এই দায় না নিলে সুস্থ কিছুই বিকশিত হবে না। বহুবছর আগে এই বিষয়েই কিছু ভাবনা প্রকাশ করেছিলাম। ভাবনাগুলো, হতাশাগুলো বদলাতে পারছি না। পুনরাবৃত্তি করছি, বা বলতে পারেন প্রলাপ বকছি।

অস্ত্রের চাইতে কলম শক্তিশালী; একথা প্রযোজ্য সেখানেই যেখানে জ্ঞান-নীতির-সত্যানুসন্ধানের প্রতি শ্রদ্ধা আনুগত্য আছে সংখ্যাগরিষ্ঠের।

গোটা বিশ্বকে হিসেবে এনে একক মানুষ ভাবলে, কত না এগিয়েছে মানুষ শিক্ষায় , ভাবনায়, সহমর্মিতায় … তবে তার ছাপ নেই কেন এই পোড়া ভূখন্ডে?! যদি হাজার বছর পিছিয়ে যাই মানুষের ইতিহাসে; তবে অস্ত্রের, গায়ের জোরের, বর্বরতার সাক্ষ্যই মিলবে সর্বত্র, কলমের জোরের কথা সেই সময়ে হয়তো হাস্যকরই শোনাতো। এ কী ভয়াবহ লজ্জা যে, আজও এই ভূখন্ডে সেই হাজার বছরের পুরনো হাসিই শোনা যায়! এই ভূখন্ডে শুধু মসিতে কিছু জয় হবে কি? না কি মসির সাথে যুক্ত হওয়া দরকার অসি ? যারা ধর্মের নামে দেশী-বিদেশী নানা গোষ্ঠির পোষা জন্তু হয়ে যায় তাদের নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব আছে বুঝলাম … কিন্তু ধর্ম-মানা পোষা-মানুষগুলোর এই জান্তব খেলায় নিষ্ক্রিয়-নির্বিকার থাকার, এমনকি কলমকেই দোষী করবার যে ব্যাপক প্রবণতা দেখি তার কার্যকারণ কি? আমরা গ্রহণ করেছি অনেক কিছু, কিন্তু ফেলতে শিখি নি, টেনে নিয়ে চলেছি কিছু বর্জ্য বিশ্বাস সন্দেহ, সমস্যাটা সেখানেই কি?

একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার চেষ্টা ছিলো, কিন্তু এর চাইতেও ভয়াবহ হলো নিজ ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাসের প্রতি নির্লিপ্ততা, এমনকি ঘৃণা তৈরী করতে পারা! এদেশেরই ক্ষমতালিপ্সু সংস্কৃতিবোধ বর্জিত শাসকেরা এই ভয়াবহ কাজটা বেশ ভালোভাবেই করতে পেরেছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে! এই অবস্থার সুযোগ নিয়েই পল্লবগ্রাহী, গভীরতাহীন বুদ্ধিজীবীদের জোয়ারে মিডিয়া সয়লাব! একাত্তরের নিধনযজ্ঞ সত্ত্বেও আমাদের ছিলো / আছে হাসান আজিজুল হোক, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী , আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত ওসমান, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ এমনই আরো বেশ কজন লেখক বুদ্ধিজীবী … মানুষের মনের বাজারে এঁরা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেন নি যেমনটি পেরেছেন হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ঘরানার লেখকেরা! এরই ধারাবাহিকতায় তৈরী হয়েছে পল্লবগ্রাহী, স্তাবক, ঝোপ বুঝে কোপ মারা একশ্রেণীর বাচাল বুদ্ধিজীবী! এসবের চাইতে ফরহাদ মজহার পর্যায়ের পিচ্ছিল বুদ্ধিজীবীও হয়তো ভালো ছিলো! প্রশ্ন করার, সংশয় প্রকাশ করার অধিকার না পেলে লেখক কীভাবে বাঁচে?! গায়ের জোরে, হিংসার বিস্তারে যারা কথা/লেখা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তারা কি মানুষের কল্যাণ চায়, তারা কি ধার্মিক? যদি না হয়, তবে তাদের অনুভূতিকে কেন ধর্মানুভূতি বলা হবে? অপরদিকে যারা হিংসা-বিদ্বেষ ছাড়াই ধর্ম পালন করে তাদেরতো কিছুই এসে-যায় না, কোথায় কে কী বললো তাতে! সভ্যতার এই পর্যায়ে এসে আরো যে কত-শত সূক্ষ্মতর অনুভূতির পরিচয় পেয়ে গেছে মানুষ সেসবের অনুসন্ধান-ই বা করবে কারা? বর্জন ছাড়া অর্জন সম্ভব হবে কি?

৫ Comments

  1. ফৈয়জ

    বিষয়টা আসলে নপুংসতার নয়। বিষয়টা স্বার্থের সংঘাতের। স্বার্থের সংঘাত মানুষের বেশিরভাগ আচরণ পরিচালনা করে।

    Reply
    • গৌতম দত্ত

      স্বার্থের সংঘাত সবখানেই, সবদেশেই কমবেশী রয়েছে, থাকবে। কিন্তু নির্লিপ্ততা, ভীরুতা আর দায়বোধহীনতার এমন নিম্নমুখী যাত্রা একটা সাংস্কৃতিক রোগ। এমন কিন্তু নয় যে আমরা, সমালোচনা বা নিন্দা-চর্চা করি না, বরং ওসব আমাদের বিনোদনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলছিলাম ভাষা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, দর্শন, ইতিহাস প্রসঙ্গে আমাদের দায়বোধহীনতার কথা … যেন ওসব ঠিকঠাক রাখার ঠিকাদারি শুধু লেখক-বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিকের! শিক্ষিত সুযোগপ্রাপ্ত মানুষমাত্রেরই দায় থাকবার কথা।

      Reply
      • ফৈয়জ

        ইতিহাস সাক্ষী দিয়েছে, ভাষা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি ঠিকঠাক রাখার ঠিকাদারি চিরকাল সমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ করে এসেছে। এদের হাত ধরেই কোন কোন সমাজের উত্থান কিংবা অধঃপতন ঘটেছে। এটাই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তন। এক দার্শনিক বহুকাল আগে বলেছিলেন যে, এখন আমি নির্ভর ছিলাম তখন আমি সমগ্র পৃথিবীটাকে বদলাতে চেয়েছিলাম। ‌ এখন আমি জ্ঞানী , তাই আমি শুধু নিজেকে বদলাচ্ছি। ‌

        Reply
        • স্বপন মাঝি

          আমরা শহর ছেড়ে পালিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। পথে পথে দেখেছি, মানবিক মানুষের কী বিপুল উদ্দীপনা। পথে পথে মানুষ এটা ওটা নিয়ে পথিকদের ক্লান্তি দূর করার সেকি সেবা! ভুলে যাবার মত নয়। ওটা কেবল গুটিকয় মানুষের উত্থান ছিল না ভাই। গ্রাম থেকে যখন অন্য গ্রামে পালিয়ে গেছি, কী বিপুল আগ্রহে মানুষ আশ্রয় দিয়েছে, সেবা দিয়েছে। এসব কিন্তু ভুলে যাবার নয়। কিন্তু এখন সময়টা একেবারে উলটো। মানুষগুলো যেন কেমন। কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসে না, এ সত্যকে অস্বীকার করি কেমন করে ভাই?

          Reply
  2. jessamine Dina Roy

    একটা ঘটনা লিখি? আজ কোলকাতা, জার্মান, বাংলাদেশ তথ্য ডিজিটালাইজেস্নের একটা মিটিংএ ঢা. বির প্রতিনিধি কিছুতেই তথ্য শেয়ারের পক্ষে মত দিতে পারেন নি।তিনি ঠিক আমাদের নপুংশক ভি সি মহোদয়কে এর পক্ষে নিয়ে আসতে পারবেন।যদিও মূল বিষয়টাই ছিলো ৩ দেশের গ্রন্থাগার ইন্ডেক্স একত্রীকরণ করে প্রকাশ করা।

    Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: