চপ-চটপটি
গাছে চোট মারে কাঠুরিয়া, শোনো চয়নের টঙ্কার;
চটক থাকলে চট ক’রে গাছ কাটে কুঠারেতে তার।
গাছ থেকে ছাল চেঁছে এনে লোকে বানাত চট,
পাট থেকে চট হয় চটকলে আজকাল চটপট।
চট করে যা তাই তো চটক, সন্দেহ নাই তায়;
মোহজনকতা, ভড়ং, বাহার চটক হয়ে যায়।
চটকদারের চটক দেখে চটে যে আমার মন;
চড়াইপাখীটি ছটফট করে, চটক সে কারণ।
চট যদি যায় সক্রিয় হয়ে, তা হয়ে যায় চটি;
চট ক’রে তুমি দু পায়েতে পরে নাও চটি দু’টি।
হয় চট্চট্ চটির শব্দ, ধীরে ধীরে হাঁট আরও;
চটি বইখানি চট্পট্ ক’রে পড়ে ফেলতে পারো।
পান্থশালাকে চটি বলা হয়, চট ক’রে সেথা যাই;
চটি মানে হয় মকরধ্বজ, অভিধানে খুঁজে পাই।
চটিত হল চটির তারণ, চট মারা হয় যাকে;
সেই লোকটি চটে গেলে দোষ দিব না তাকে।
মাংসের ভুঁড়ি ঘুগনিতে দিয়ে চটপটি হয়ে যায়,
বালকের দল চপ-চটপটি চটপট ক’রে খায়।
কাঠির আগায় আঠা দিলে পরে তা করে চটচট,
গ্রামের বালক সেই কাঠি দিয়ে পাখী ধরে চটপট।
চ-এর পালন চপ হয়, তাকে বোঝা খুব সোজা;
‘চপ’ ক’রে আলু চয়ন করে ভাজ চপ-তেলেভাজা।
মাংস যা দিয়ে ‘চপ’ করা হয় তাকে ‘চপার’ বলি,
কাঠে কুঠারের কোপ মেরে চেকলা উঠিয়ে চলি।
চপলেরা করে চপ-এর লালন, যেন খাবলে ধরে;
দোষ নিশ্চয় না ক’রে চপল বধবন্ধন করে।
চপলের আধার চপলা হবে, সে তো চঞ্চলা নারী;
বিদ্যুৎকেও চপলা বলে তা চমকে চিনিতে পারি।
চট নবরূপে চটু হয়ে গেলে দেয় সে সুখানুভূতি,
চটুল বাক্য ভাল লাগে বোঝো গো বুদ্ধিমতি।
অম্লমধুর চটুল বাক্যে চাটনি বানানো যায়,
তার হলে তা সকল লোকেই চেটে খেতে চায়।
চট্টে চটের টঙ্কার রহে, চট্টরা সেনাপতি;
চট্টগ্রামে বাস করে ওরা, করে না কারো ক্ষতি।
রাজপুরুষ আর আমলার দল চট্ট হতে পারে,
সেই চট্টরা প্রয়োজন হলে চট ক’রে কোপ মারে।
চট্টদিগের রাজা হন যারা তারাই চট্টরাজ,
ওরা করতেন রাজ দরবারে বড় আমলার কাজ।
চট্টগণের শিক্ষক হন চট্ট-উপাধ্যায়,
তাঁর কাছ থেকে চট্টরা দেশ শাসনের পাঠ পায়।
চাট মানে মুখরোচক খাদ্য অথবা অনুপান;
মাতালেরা মদ খাবার তরে করে চাট সন্ধান।
চাট মানে চাটা হতে পারে জানি, লেহন বলব তায়;
গাভী বৎসকে পরম আদরে চাটাচাটি করে যায়।
সেই বৎসকে বন্ধন ক’রে দুগ্ধ দুইতে খাঁটি
ঘোষ গাইটির কাছে গেলে গাই ছুঁড়ে তার পা’টি।
পিছনের পায়ে লাথি মারে গাই, চাটি বলা হয় তায়;
তবলাবাদক তালে তালে চাটি মারে তার তবলায়।
— ‘বর্ণসঙ্গীত’।
চটপট পড়ে ফেললাম। চট করে একটা দুয়ার খুলে গেল। লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।