Select Page

কোন পথে যে চলি

কোন পথে যে চলি

দেশী ছোট মাছের চচ্চড়ি খাচ্ছিলাম বেশ মজা করেই। হঠাৎ এই মাছটার বেজার মুখাবয়বটায় চোখ পড়লো! কী বিষাদ! জানি, বিষাদ বেদনা প্রকাশের মতো মুখের পেশী বা গঠনশৈলী নেই মাছটির; জানি আমার মস্তিষ্কই জাগায় সে ভ্রম, তবুও স্নায়ুগত বেদনা তো সত্য! নিজেকে বড় মাপের বদ প্রাণী মনে হলো; মাঝে মাঝেই এমন হচ্ছে আজকাল! আরও যেসব জন্তু পাখির মাংস খাই, তাদের মাথাটা আস্ত পাতে উঠলে ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ হতো! প্রাকৃতিক প্রবণতার সবকিছুই শিল্পসম্মত নয়, শিল্পই অপ্রাকৃতিক কি? প্রশ্ন জাগে!

চর্বিতচর্বন: মানবিক নীতিমালা-ভাবনার ছড়াছড়ি সত্ত্বেও আধুনিক মানুষ যে ছদ্মাবরণে স্মরণকালের বর্বরতম অবস্থানেই আছে, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা লাগে না, একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলেই হয়। মানুষের খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিবাস, শিক্ষা আর বিনোদনের স্বার্থে কতসংখ্যক প্রাণী যে মুক্ত জীবন হারিয়ে বন্দীদশায় আছে, কাটাছেড়া হচ্ছে সেই পরিসংখ্যান যে কোন বোধসম্পন্ন মানুষকেই স্তম্ভিত করবে! এর সবটাই কী অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, প্রগতির জন্য অবশ্য-জরুরী? মানুষ নামের জন্তুটির সাথে অন্যান্য প্রাণীর শরীরগত পার্থক্য খুব বেশী নয়। অনেক মিল আছে বলেই জন্তুর ওপর পরীক্ষা করে সেসব পরীক্ষার ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, করা হচ্ছে।

শুকরের ( porcine) ইনসুলিন মানুষের ইনসুলিনের মতোই এবং ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। Xenotransplantation অর্থাৎ কাছাকাছি মিল থাকা অন্য জন্তুর অঙ্গ মানুষের শরীরে ব্যবহৃত হবে হয়তো অচিরেই। খুবই সীমিত মাত্রায় গরু এবং শুকরের হার্ট ভাল্ব টিস্যুর ব্যবহার এখনই হচ্ছে। মানুষের জটিল চিন্তা করবার ক্ষমতা আছে, অন্যান্য প্রাণীর নেই, মানুষের ভোগের জন্যই সব; এসব যুক্তি হল কুযুক্তি। ব্যথা-কষ্টের অনুভূতি, মুক্ত থাকার আনন্দানুভূতি এসব মানুষের একার নয়, অন্য প্রাণীদেরও রয়েছে। নীতিসচেতন মানুষ কেন নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের সবকিছু জেনে দেখেও না জানার ভাণ করে অথবা চোখ ফিরিয়ে রাখে?

মানুষ নামের জন্তুটির মূল গঠনই (শরীরগত এবং ভাবনাগত) কি এর কারণ? নৈতিকতার বিচারে মানুষ তবে খুব উন্নত মানের প্রাণী নয় ( অন্তত: এখনও)? এসব কথায় ভণ্ডামির লক্ষণ পাবেন অনেকেই। স্বীকার করছি, দ্বিচারিতা আছে। এই দ্বিচারিতা ( আরও বহু বিষয়ের মতই) মেনে নিয়েই বলবো, তবুও বদলে যাবার পথ খুঁজি, অনেকেই খোঁজেন। না নিরামিষভোজি হওয়া সার্বিক সমাধান নয় বলেই মনে করি। বিকল্প প্রযুক্তি , যেমন কালচারড্ মিট সম্ভব। সেই পর্যায়ে যাবার আগে, হিউমেইন ( humane) হওয়া যায় এবং অবশ্যই কমিয়ে আনা যায় হত্যাযজ্ঞের মাত্রা! এই বিকল্প প্রযুক্তির জন্য সামাজিক চাপ প্রয়োজন। … এই চাপের বলয় তৈরীর জন্য প্রয়োজন বোধের উন্নয়ন।

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার