Select Page

স্ত্রীজাতির অবনতির সেকাল এবং একাল

স্ত্রীজাতির অবনতির সেকাল এবং একাল

“এই পঞ্চাশ বর্ষের মধ্যে পার্সি মহিলাদের অনেক পরিবর্তন হইয়াছে বিলাতি সভ্যতা যাহা তাহারা এখন লাভ করিয়াছেন পূর্বে ইহার নাম পর্যন্ত জানিতেন না! মুসলমানদের ন্যায় তাহারাও পর্দায় থাকিতেন! রৌদ্র, বৃষ্টি হইতে রক্ষা পাইবার নিমিত্তে তাহারা ছাতা ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন না। প্রখর রবির উত্তাপ সহিতে না পারিলে জুতাই ছাতা রুপে ব্যবহার করিতেন গাড়ির ভিতর বসিলেও তাহাতে পর্দা থাকিত। অন্যের সম্মুখে স্বামীর সহিত আলাপ করিতে পারিতেন না! কিন্ত আজকাল পার্সি মহিলাগণ পর্দা ছাড়িয়েছেন খোলা গাড়িতে বেড়াইয়া থাকেন। অন্যান্য পুরুষের সাথে আলাপ করেন। নিজের ব্যবসা ও দোকানদারী করেন! প্রথমে যখন কতিপয় ভদ্রলোক তাহাদের স্ত্রীকে পর্দার বাহির করিয়াছিলেন, তখন চারদিকে ভীষণ কলরব উঠিয়াছিল!  ধ্ববলকেশ বুদ্ধিমানগণ বলিয়াছিলেন, ” পৃথিবী ধ্বংসকাল উপস্থিত হইল”!  _ বেগম রোকেয়া।  ( জন্মঃ ১৮৮০, ৯ ডিসেম্বর, মৃত্যু ১৯৩২, ৯ডিসেম্বর) 

বেগম রোকেয়া আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বে তাহার মতিচুর প্রবন্ধে তৎকালীন সময়ে স্ত্রী জাতির অবনতি সম্পর্কে বঙ্গীয়  মুসলিম নারীদের সাথে পার্সি নারীদের একটি তুলনা মূলক আলোচনা করিয়াছেন যে, “পার্সি নারীরা অনেক সভ্য হয়েছেন এই জন্য যে, তারা এখন আর পর্দার ভেতরে থাকেন না। এক সময় যারা ছাতা ব্যবহার করার অধিকার রাখিতেন না!  বিলেতের নাম পর্যন্ত শোনেন নাই, আর এখন তারা খোলা গাড়িতে ঘুরে বেড়ান!  

যেখানে স্বামীর সাথে প্রকাশ্যে কথা বলা ছিল নিন্দনীয় সেখানে আজ তারা অপর পুরুষ অর্থাৎ পরিবারের বাহিরের পুরুষের সাথে কথা বলছেন! যেখানে মুসলিম হাদিসে বলা আছে ” পর পুরুষের সাথে কথা বলা হারাম”!  তো আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মুসলিম নারীদেরকে অন্তঃপুর ( অন্ধকার জগত)  থেকে বের করে জাগিয়ে তোলার জন্য রোকেয়া পার্সি নারীদের পর পুরুষের সাথে কথা বলাকে আধুনিক চিন্তার, অগ্রসর নারী হিসেবে দেখেছেন! 

মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও রোকেয়া আপা “হারাম” বিধানকে গুলি করে নিজের অগ্রসর চিন্তাকে লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।  গ্যালিলিওর উদাহরণ দিয়েছেন সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে অন্ধকার,কূপমন্ডুক  এই সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জেল, জুলুম ভোগ করার পরেও একাই কিভাবে  লড়াই করতে হয়! তিনি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিপরীতে বিজ্ঞানকে দাঁড় করেছেন!  কি পরিমান জ্ঞানী,দূরদর্শী আর সাহসী হলে একশো বছর পূর্বে এই পুরষশাসিত সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পেরেছেন! বেগম রোকেয়ার কোন সন্তানাদি ছিল না! 

উনার স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ১ম স্ত্রীর সন্তানেরা সব সম্পত্তি থেকে বেগম রোকেয়াকে বঞ্চিত করেছেন! বাকি জীবন বেগম রোকেয়া একাই লড়াই সংগ্রাম করেছেন! উনার আত্ত্বীয়_স্বজনরা উনাকে নাস্তিক বলে জায়গা দেননি! তাতে কি হয়েছে! বেগম  রোকেয়া মানুষের মাঝে উচ্চ মর্যাদায় আছেন! আত্ত্বীয়_ স্বজনরা ভাগারে নিক্ষেপ হয়েছে! 

আজ প্রতি পদক্ষেপে নিজের জীবনে বেগম রোকেয়ার সেই সমাজ বাস্তবতাকে দেখতে পাচ্ছি!  আরও কত ভয়াবহ নির্মম ছিল এই সমাজ ব্যবস্থা! অন্ধকার সমাজের বিপরীতে চলতে গেলে ১ম প্রতিবন্ধকতা আসে ঘর এবং পরিবার থেকে! একজন নারীর স্বাধীনভাবে একা জীবন বেছে নেবার  মতো সমাজ এখনো তৈরি হয়নি! তারা সবকিছু কেড়ে নিয়ে হত্যা করতে চায় ঐ নারীকে এই ব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান! একজন মায়শা আমিনীকে চুল খোলা রাখার অপরাধে  যেভাবে হত্যা করেছে ইরানী ফ্যাসিস্ট পুলিশ !  পর পুরুষের সাথে আলাপ চারিতায় গল্পে, আড্ডায় জমে উঠার প্রগতিশীলতা এই সমাজ মেনে নেয় না! 

এ যে মহাপাপ! এখনো স্বামীর আয়ের উপর শতভাগ নির্ভরশীল নারীরা তার দাসত্বের গর্বে বলিয়ান হয়ে বলে

 ” আমরা স্বামীর সংসার করে খাই! “

আত্মনির্ভরশীল স্বধীনচেতা, নারীরা হলো সমাজের বাহিরের! অন্য পুরুষের সাথে রিক্সায় ঘোরাঘুরি করা লোক লজ্জার! রোকেয়া আপার স্বরণে বলি আমরা এখনো আপনার স্বপ্নের সমাজে পৌঁছাতে পারিনি! এখনো বহু অন্ধকার পথ পাড়ি দিতে হবে!  তবে হাল ছাড়িনি আপা।একদিন ঠিক কেউ না কেউ আপনার স্বপ্নের স্বাধীন সমাজে আমাদের সবাইকে নিয়ে যাবে!  সেদিন হয়তো আপনার সাথে সাহিত্য,আর জ্ঞান- বিজ্ঞান নিয়ে আমরা নির্বিঘ্নে আলোচনা করতে পারবো আপা।

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার