Select Page

নারীর সংগ্রাম প্রতি পদক্ষেপে

নারীর সংগ্রাম প্রতি পদক্ষেপে

লেখাটি’, সদ্য প্রয়াত বাবুদাকে ( সন্তোষ কুমার বাবু) উৎসর্গ করছি!

আমাকে একা করে দেবার যে হীন, নোংরা রাজনীতি বহুদিন থেকে করা হচ্ছে! অনলাইন অফ লাইনে বুড়া থ্যাবড়া যার এক পা কবরে গিয়ে আছে! যার সাথে কথা বলি যোগাযোগ করি তার সাথেই নাকি আমার “প্রেম হয়ে যায়! নারী পুরুষের সম্পর্ক তৈরি হয়!”

বলি এরা এতো পঁচনশীল! সাংগঠনিক কাজ করার ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টিতে ধর্মীয় বেড়াজাল ভেঙ্গে অপরিচিত নারী-পুরুষ শুধু কমরেড পরিচয়ে এক ঘরে থেকে স্বচ্ছ চরিত্র গঠণ এর প্রক্রিয়া ও নীতি চালু রয়েছে!

এসব নিয়ম নীতি কাঠ মোল্লাদের পক্ষে সম্ভব নয়! ওরা নারী পুরুষ মানেই ভোগবাদীতা বোঝে তাই নিজেদের ইন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না! কিন্তু কমিউনিষ্টরা যেহেতু ভোগবাদী নয়! দুজন_নারী পুরুষের চিন্তার এবং ইচ্ছের বিপরীতে থেকে তারা একসাথে এক ছাদের তলায় থাকলেও তাদের চরিত্রিক স্খালন হয় না!
এমনটাই জানি! কিন্তু এখন দেখছি ঐসব কমিউনিস্টদের কাছে শেখা নিয়ম নীতি শুধু এখন উল্টে যাচ্ছে ! একজন নারী নিজ পরিবারের পুরুষ ছাড়া অন্য কারও সাথে আড্ডা দিলে, রিক্সায় উঠলে, এমন এক সাথে চা পান করলেও প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়! শুধু তাদের সাথে ভিন্ন মতের কারণে সংগঠন ছেড়ে এসেছি বলে!

আহারে তাদের রাজনীতি! কিন্তু জেনে রাখা প্রয়োজন অবোধরা আমি এসব মোকাবেলা করেছি সেই শৈশবেই! আমার গ্রাম ছিল অত্যন্ত পশ্চাৎপদ! আশেপাশে ছিল চরম দারিদ্র্যতা, নিরক্ষরতা, অশিক্ষা কুশিক্ষা আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন! ৭_৮ বছর বয়স যেখানে হলেই আর মেয়েদেরকে ছেলেদের সাথে খেলতে দিত না পরিবারের অভিভাবকরা! সন্ধ্যার আগেই মেয়েদেরকে ঘরে ঢুকতে হতো!

১৩১৪ বছর বয়স থেকে বিয়ের দেবার চিন্তা বাবামাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলতো!
মেয়ে হিসেবে দরিদ্র বাবা-মায়ের ঘরে আমিও এই অনুশাসনের মধ্যে ছিলাম!
“কড়া শাসন চলতে থাকতো এখন বড় হয়েছে! বাহিরে যাওয়া যাবে না! ছেলেদের সাথে খেলতে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি!” সেই ৭ বছর বয়স থেকে!

আমি আমার বাবা-মায়ের একরকম বাধ্যানুগত শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলাম! যা বলতো সাথে সাথে তাই মানতাম। কিন্তু এর বাহিরে আমার আরেকটি দূরন্ত ও স্বাধীন মন ছিল! মায়ের শাসন মেনে চলতে চলতেই হঠাৎ ঘরের বাহিরে যেতাম! ব্যাটমিন্টন ধরতাম। এক ফাঁকে বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ খেলে এসে আবার ঘরে বসতাম।

আবার একদিন ফুটবল নিতাম প্রতিবেশি সমবয়সী বাচ্চাদের ডেকে রাস্তার উপর ফুটবল খেলতাম। এভাবেই বড় হতে হতে মামাদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেলাম!
বড় হয়েছি বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন! সেই ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকতেই! বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্বভাব সুলভ ভাবেই পাড়ার ছেলেদের সাথে নির্ভয়ে কথা বলতাম! ঘন্টা খানিক না যেতেই আশে পাশে শোরগোল পড়ে যেত! তখন সন্ধ্যাবেলা পড়ার টেবিলে পড়তে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছি!
কানে বাজতো সেকি গুঞ্জন! এই নাসিমা অমুক ছেলের সাথে আজকে কথা বলেছে! পীড়িত হইছে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জার বিষয়! এই মেয়ে নিয়ে আর মুখ দেখানো যাবে না!

এরপর শুরু হতো মামাদের অত্যাচার! “কাল থেকে যদি কোন ছেলের সাথে কথা বলেছিস তো বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেব! তোর মাকে সহ বের করে দেব! তোর মা শাসন করে না! এসব শুনে আমার মা চিন্তায় পড়ে যেত! অনেক সময় মামাদের সাথে প্রতিবাদ করত! কান্না জুড়ে দিত! দুদিন পর আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যেত!

আবার কিছুদিন পর রাস্তায় ফুটবল খেলা নিয়ে শুরু হতো একই রকম অত্যাচার বড় হয়ে গেছে রাস্তায় ফুটবল, খেলতে যাস! সাহস কত বড়! এখনি বিয়ে দিয়ে দাও!
একে আর ঘরে রাখা যাবে না ইত্যাদি!

কিছুদিন পর আরেক ঘটনা আরেকজন প্রতিবেশি ভাইয়ের কাছে পড়া জানতে গিয়েছি তো শুরু হয়ে গেল নাসিমা অমুকের সাথে প্রেম করছে! হায়! হায়! এই মেয়ে তো বিয়ে দেয় না! দেখা যেত পরদিন সেই ভাই লজ্জায় আর আমার সামনে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারত না! আমরা যে পাড়ার ভাইবোন এসব কোন চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল না! সেটা কি করে বোঝবো!

আবার কিছুদিন পর আরেক ঘটনা “বাজার স্টেশন বা চৌরাস্তা মোড়ে দাঁড়িয়ে নবদার সাথে পথ সভা করেছি ! ভাষণ দিয়েছি!” সাহেদ নগর গ্রামের লোকজন অবাকে বিষ্ময়ে দাঁড়িয়ে সে ভাষণ শুনে শেষ না হতেই দৌড়ের উপরে গ্রামে ঢুকে ” আরে আমাদের নদ্দেশ (নওজেশ) কাকার মেয়ে নাসিমা চৌরাস্তায় ভাষণ দিতেছে! দেখো গিয়ে কত লোকজন হায়রে পুরুষ মানুষ! তাদের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতেছে!

এরপর আমার বাড়ির ফেরার পালা পথ সভা শেষ করতেই মনে হতো কোথায় যেন ঝড়ের আগাম আভাস পাচ্ছি! হ্যাঁ ঠিক তাই! বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রতিবেশিরা “বুঝেছ নাসিমা আজ তোমার খবর আছে! তুমি কি করেছ! ভাষণ দিছ! এই বেপারী পাড়ার কোন মেয়ে আজ পর্যন্ত যা করে নাই! বাপরে বাপ তোমার সাহস বেজায় ভারি! এরপর মামাদের কড়া শাসন বোধ করছি এখন আঁচ করতে পারবেন!

এরপর আরেকদিন সাইকেল চালানো নিয়ে গ্রামের লোকেরা শালিস করলো! আমার বাবাকে সমাজে বন্ধ রাখলো! বাবা আমার নিরীহ সাধাসিধে মানুষ ছিলেন! আমার সাইকেল চালানো নিয়ে সমাজ বাবাকে বন্ধ রাখল মেয়ে সাইকেল চালিয়ে অন্যায় করেনি ভেবে মেয়েকে টু শব্দটি করেনি! কোন জবাবদিহি চাননি মেয়ের কাছে যে, “আজ তোর জন্য আমাদের এই অবস্থা!
সমাজ আমাকে বন্ধ রাখল আমি সমাজের কাছে ছোট হয়ে গেলাম! “না এখানে আমার কোন আঁচ সেদিন লাগেনি! আব্বা লাগতে দেননি! হঠাৎ বাবার জন্য আমার ভিতরটা হু হু করে উঠছে! আমাকে আগলে রাখার সেই বাবা পৃথিবীতে নেই! অনেক আগে পৃথিবীর জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন! তার মেয়ে যে, আজ বড় একা !

কিছুদিন পর আরেক কাহিনী ঢাকায় এসছি সংগঠণের মিটিং করতে বাড়ি ফিরতে রাত ১০ টা বেজে গিয়েছে! মামারা সন্ধ্যা থেকেই খুঁজতে থাকতো, খুকি কোথায়? নাসিমা কোথায়? বাড়িতে নাই! ফেরে নাই কোথায় গেছে? আজকে জবাই করে ফেলবো! মা রাতের বেলায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে গলা শুকিয়ে যেত! এরপর মা অর্ধেক রাস্তা থেকে এগিয়ে নিয়ে ভয় পেয়ে গভীর অন্ধকার দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকাত মামাদের হাত থেকেই রেহাই পাওয়ার জন্য!
তবু মামা কখনো কখনো অন্ধকারে খপ করে ধরে ফেলতো! এরপর ঘরের পিছনে বাঁশ ঝাড় থেকে কাঁচা কঞ্চি ভেঙ্গে এলোপাতাড়ি পিটুনি দিয়ে ” বল আর কখনো যাবি কোথাও! সাহস কত বড় মেয়ে মানুষ পার্টির লোকের সাথে (পর পুরুষের সাথে) ঢাকায় যায়! তোর বিয়ে হবে না! কাল থেকে তোর বাড়ির বাহিরে যাওয়া বন্ধ! কলেজে যাওয়া বন্ধ!
এখন থেকে বাড়ি থাকবি এটাই তোর শাস্তি! “সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই হলো আমার বেড়ে উঠা! শেষ পর্যন্ত সাহেদ নগর গ্রামের কোন ছেলের সাথে আমার প্রেম হয়নি প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল! আমার বাল্য বিবাহ ও হয়নি! দারিদ্রতার কারণে কলেজ জীবনেই নিজের পড়ালেখার দায়িত্ব নিজেকে বহণ করতে হয়েছে! বাবা গত হয়েছেন পরে বড় সংসারের কোন দায়িত্ব নেয়নি! কখনো নিতে চায়নি! বড় ভাই থাকতেও পরিবারের দ্বায়িত্ব ছাত্রবস্থায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম। ছোটবোন আমার আগেই বিয়ে দিয়েছি মায়ের জোড়ালো আপত্তি থাকা স্বত্তেও! কত প্রথাই ভাঙ্গতে হয়েছে!

আজকে এই সময়ে এসে ঐ একটি গোষ্ঠী আমাকে সেই সাহেদ নগরের কৈশোরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করছে!
যা আমি কৈশোরে মোকাবেলা করে এসেছি!
এখন আমার বয়স কৈশোরের দ্বিগুণ! এসব হীন কৌশল এখন আমার পায়ের তলা দিয়ে যাবে ভ্রষ্টরা! তোমাদের চেয়ে আমার গ্রামের মসজিদের মোয়াজ্জেম প্রয়াত মোহাম্মদ হুজুর অনেক আধুনিক বড় মাপের মানুষ ছিলেন! আমার এতো ঘটনায়ও আমাদের তিন বোনের প্রতি মোহাম্মদ হুজুরের কখনো নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়নি! অথচ হুজুর তবলীগ জামাত করতেন! আমাদের প্রতি মায়া থেকে যৌতুক ছাড়াই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন! হুজুর আল্লাহ আপনাকে শান্তিতে রেখেছেন নিশ্চয়ই!
পৃথিবীকে সাজাতে এমন বড় মনের মানুষ প্রয়োজন!
ভুঁয়া, লুলা কমিউনিস্টদের দিয়ে কিছু হবে না! এটা পরিষ্কার! এদের কাছে নারীরা নিরাপদ নয়!

আমাকে একা করার যে, অপকৌশল প্রয়োগে আপনারা লিপ্ত আছেন ! তা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি! শত নিপীড়ণ ওর পরেও আপনাদের অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করবো না! সত্য সত্যই একা হলেই তা মিথ্যা হয়ে যায় না!কথায় আছে, শয়তান এর পাল্লা ভারি বেশি! যত অন্যায় সংগঠিত ভাবে হয় দলগতভাবে যেমন: গণধর্ষণ! সুতরাং সখ্যায় বেশি হলেই তারা সঠিক এটা বলা যায় না! এই দুনিয়ায় সৎ মানুষষেরা একা! এটা প্রমাণিত!

১ Comment

  1. স্বপন মাঝি

    নারীর জীবনে প্রতি পদে পদে বাধা। তথাকথিত কিছু প্রগতিশীলও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নির্মোহভাবেই এদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার।

    Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: