Select Page

বদনে কথনেও ধর্ম্মের পরিচয়

বদনে কথনেও ধর্ম্মের পরিচয়

মাঝে মধ্যে এক দোকানে বসে চা পান করি।
দোকানি একজন মহিলা। এমন একদিন বসে চা পান করছি, দোকানির পরিচিত একজন কাষ্টমার উনাকে বললেন – বৌদি একটা চা বানাও।

শোনার সাথে সাথে মহিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, কর্কষ ভাষায় ঝাঝালো কন্ঠে কাষ্টমারকে বললেন – আপনারে আমি বলছি না আমারে বৌদি কইবেন না, আমি কি হিন্দু ? আমারে বৌদি কন !

যাকে উদ্দেশ্য করে বলা সেই লোকটি হত বিহব্বলের মত দাড়িয়ে থাকলো। দোকানের মালিক ভদ্র মহিলার সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ভালো, কেননা মাঝে মধ্যে আমি সেখানে চা পান করি। সেই কারণে যাতায়াত আছে কথাবার্তা ও চলে।

আমি বললাম কেন, বৌদি বললে সমস্যা কি ?

বৌদি মানে তো বড় ভাইয়ের স্ত্রী, এটাতো মানুষ সম্মান করে বলে।

মহিলা বললেন – হে আমারে বৌদি বৌদি কয়, হের কারনে আমার একজন কইছে, ভাবি আপনি কি হিন্দু , লোকে আমারে হিন্দু ভাববো !

আমি বললাম হিন্দু যদি ভাবে, তাতে করে সমস্যা কি ?
মহিলা কিছু বললেন না, কিন্তু ভাব খানা এমন করলেন, যা দেখে শুনে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, উনাকে লোকে হিন্দু ভাবুক এতে উনি রাজি নয়।

কি আশ্চর্য দেখেন আমরা ভাষাকে পর্যন্ত হিন্দু মুসলমান বানিয়ে ফেলেছি!
সম্পর্ক বাচক বাংলা শব্দ গুলি সব হয়েছে হিন্দু আর আরবি ফারসি হয়েছে মুসলমান। পৃথীবির কোন জাতী তার নিজের ভাষাকে এই ভাবে অবমাননা করে বলে আমার জানা নেই।
শুধু ভাষা কেন, পোষাক পরিচ্ছেদ গাছ পালা পশু পাখি পর্যন্ত আমরা হিন্দু মুসলমান বানিয়ে ফেলেছি।
জল বললে সে হিন্দু, ধুতি পড়লে সে হিন্দু , তুলসি গাছ বাড়িতে থাকলে সে হিন্দু। অথচ জল ধুতি বাংলা শব্দ এবং বাঙ্গালীর ঐতিহ্যগত পোষাক।
ছোট বেলায় দেখতাম পিপড়াদের মধ্যে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করে ফেলা হয়েছে, লাল পিপড়া হিন্দু আর কালো গুলো মুসলমান। কেননা কাল গুলো কামড়ায় না।

কে এদের বোঝাবে, কেমন করে বা বোঝাবে, শতো বৎসরের সাম্প্রদায়িক বিভেদ সাধারন মানুষের মনের মধ্যে এমন করে মিশে আছে, এমন গভীরে তার অবস্থান যে, সেই বিভেদের কালিমা মুছে দিতে পারা খুব দূরুহ বিষয়।
জল পানি বৌদি ভাবিতে কেবল পার্থক্য হয়েছে তায় নয়, এমন কি রাষ্ট্র কিম্বা একটা মহাদেশও ধর্মের হয়ে যেতে পেরেছে। ইন্ডিয়া হিন্দু আর বাংলাদেশ মুসলমান। ওদিকে মধ্যপ্রাচ্য বলতে এক অর্থে লোকে মুসলিম দেশ গুলির সমাহারকে বুঝেছে । ছোট কালে শুনতাম গঙ্গা নদী হিন্দু আর পদ্মা মুসলমান, অথচ গঙ্গার পূর্ব দিকের ধারায় যে পদ্মা, এবং পদ্মাও যে হিন্দু পুরানের একটি দেবীর নাম সেই তথ্য না জেনেই এরা তাকে মুসলমান করেছে- নদীরও ধর্ম হয়েছে !
এভাবে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা যায়গায় আমরা সকলে হিন্দু মুসলমানে ভাগ হয়ে গেছি।
এতে করে ঈশ্বর আল্লা ভগবানের কি লাভ হয়েছে আমার জানা নেই, কিন্তু আমরা নিজেরায় নিজেদের সাথে প্রতিনিয়ত মারামারি করে মরার ভালো এক যন্ত্র বানিয়ে বসেছি।
এক দেশ তিন টুকড়ো করেও আমাদের শান্তি হয়নি, এখন বাড়িতে বাড়িতে গ্রামে মহল্লায় মানুষে মানুষে আমরা বিভক্ত হয়েছি। অথচ আমরা একই মানুষ, একেবারে অভিন্ন জেনেটিক পরিচয়।

কবি নজরুল আক্ষেপ করে এক গান বানিয়ে ছিলেন

-জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া! ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া। হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি – ভাবলি এতেই জাতির জান,
তাইত বেকুব, করলি তোরা এক জাতিকে একশ’-খান।

কবি নজরুলের সময়কার অবস্থার, আজ এতো বৎসরে কোন তুলনামূলক উন্নতি হয়েছে বলে তো মনে হয়না বরং অবস্থা এখন আরো খারাপ হয়েছে।
জানিনা অন্ধকার যুগের কালো রাত শেষ হতে আমাদের উপমহাদেশে এখনও আর কত বাকি !

১ Comment

  1. তাহের আলমাহদী

    এই লেখাটিতে শিরোনাম যুক্ত করা হয়নি।

    Reply

মন্তব্য করুন

Subscribe to Blog via Email

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 4 other subscribers

সংরক্ষণাগার

%d bloggers like this: